২০২৪ সালে সড়কে ঝরলো ৭২৯৪ প্রাণ!

সড়ক দুর্ঘটনা: একটি জাতীয় সংকট

এফএনএস : | প্রকাশ: ৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
সড়ক দুর্ঘটনা: একটি জাতীয় সংকট

২০২৪ সাল আমাদের জন্য এক দুঃসহ স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের করা প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৭,২৯৪ জন, যা কেবল একটি সংখ্যায় নয়, বরং একটি অপ্রতিরোধ্য মানবিক বিপর্যয়। দুর্ঘটনায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১,৮৮৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৫ শতাংশের বেশি। সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের জাতীয় জীবনে এক স্থায়ী আঘাত হিসেবে দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে বহু কারণ। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের অদক্ষতা, শারীরিক ও মানসিক অবসাদ এবং ট্র্যাফিক আইন না মানার প্রবণতা অন্যতম। এছাড়া দুর্বল ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজির মতো সমস্যাগুলো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যেখানে সিলেট বিভাগে এই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই বৈষম্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, জনবহুল এলাকা এবং ব্যস্ত সড়কগুলোতে ঝুঁকির পরিমাণ বহুগুণ। দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকাল এবং দুপুরে সড়ক দুর্ঘটনার হার সবচেয়ে বেশি। কর্মব্যস্ততার এই সময়ে সড়কে অতিরিক্ত চাপ দুর্ঘটনার হার বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মোটরসাইকেল চালক, পথচারী, নারী এবং শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দশটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্ধারণ, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সড়ক পরিবহণ আইন-২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের মতো পদক্ষেপগুলো এই সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তবে, কেবল সুপারিশ যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্ঘটনার হার কমাতে সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করা অত্যন্ত জরুরি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হলেও এটি মূলত মানবিক সংকট। সড়ক দুর্ঘটনায় একেকটি প্রাণের হারিয়ে যাওয়া শুধু একটি পরিবারের ক্ষতি নয়, বরং গোটা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সরকারের কার্যকর উদ্যোগ, বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং জনসাধারণের সচেতন অংশগ্রহণই পারে এই সংকট মোকাবিলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। সময় এসেছে, সড়ক দুর্ঘটনার এই ভয়াবহ চিত্র বদলে দেওয়ার।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW