অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন

এফএনএস : | প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন

বড় বড় দালান থেকে ইমারত, যাই বলা হোক না কেন? সবকিছুই তৈরি হয় ছোট ছোট ইট থেকে। ছোট ছোট ইট একটি আরেকটির ওপর বসিয়ে তৈরি করা হয় উচ্চ দালান, বহুতল ভবন। যে কোনো ধরনের নির্মাণ স্থাপনা তৈরি করতে ইটের প্রয়োজন। আর এসব ইট তৈরি করা হয় ইটভাটায়। তবে অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ ইটভাটার কারণে ফসলি জমি ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের দেশে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে যেখানে সেখানে যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন করছে ভাটা মালিকরা। ইটভাটাগুলো বিভিন্নভাবে আমাদের বাসযোগ্য পরিবেশের ক্ষতি সাধন করছে। সেই সঙ্গে ইটভাটার দূষণে বায়ুতে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে আমাদের জলবায়ুতে প্রভাব ফেলছে। জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে প্রথমত ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে নির্মিত ইটভাটার সংখ্যা ৬ হাজার ৮৭৬টি। এর মধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র অনুযায়ী বৈধ ভাটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮৫টি এবং অবৈধ ৩ হাজার ৪৯১টি। গত তিন বছরে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করা হয়েছে ৯২৫টি। এসবের মধ্যে ঢাকা বিভাগে বৈধ ১ হাজার ১৬৩টি ও অবৈধ ৬৬৪টি, রাজশাহীতে ২৫২টি ও অবৈধ ৭৭১টি, বরিশালে ৩৫৯টি ও অবৈধ ১৪২টি, সিলেটে ২৬৩টি ও অবৈধ ৩৬টি, খুলনায় ৩০৮টি ও অবৈধ ৭৯০টি, রংপুরে ১৯৪টি ও ৮৪৪টি, ময়মনসিংহে ৮১টি ও অবৈধ ৪৩৪টি এবং চট্টগ্রামে ৭৬৫টি ও অবৈধ ৭৩৫টি। এ ছাড়া অধিদপ্তরের হিসাবের বাইরে দেশে রয়েছে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা। বিশ্বব্যাংকের একটি তথ্যানুযায়ী, ইটভাটা থেকে দেশে পরিবেশদূষণ ঘটছে ১৩ শতাংশ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলেছে, এ তথ্যটি সঠিক নয়। কারণ এই সেক্টর থেকে পরিবেশদূষণ হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। আইনানুগভাবে সব অবৈধ ইটভাটা অবিলম্বে বন্ধ করা সময়ের দাবি। আধুনিক প্রযুক্তিতে পরিবেশবান্ধব ইট প্রস্তুত এবং না-পোড়ানো ইটের ব্যবহার প্রসারে উদ্যোগ নিতে হবে। আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কয়েক হাজার উদ্যোক্তা এবং এ শিল্পে নিয়োজিত ২০ লক্ষাধিক শ্রমিকের স্বার্থের কথাও বিশেষভাবে ভাবতে হবে। অনুমোদনহীন ইটভাটার কার্যক্রম কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সে উপায় খুঁজতে হবে। নতুন ইটভাটা স্থাপনে অনুমোদন দানে সতর্ক থাকতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইটভাটা তৈরিতে নীতিগত সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরূপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। উন্নত প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপনে ভাটা মালিকদের উৎসাহিত করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW