বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার অত্যাচার এতটাই নির্মম ছিল যে, তিনি আলেম সমাজকে জাতির কাছে হেয়প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলেন। এই আচরণ ছিল ফেরাউন, কারুন, নমরুদের মতো।” মামুনুল হক আরও বলেন, “শেখ হাসিনার ক্ষমতায়ন অনেকটা সেই সকল শাসকের মতো, যারা বিরোধী মতকে দমন করতে নির্দয় হয়ে ওঠে। তার পরিণতি হলো, তিনি এক পাত্রে গুলিয়ে ফেলেছেন, যেখান থেকে নাম উঠে আসে ‘শেখ হাসিনা’।”
বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করে মামুনুল হক বলেন, “অনেকেই এই দুটি দলকে এক পাল্লায় পরিমাপ করেন, যা একটি বড় অবিচার। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ইসলামি রাজনীতি করে না, তাদের রয়েছে ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন।” তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই এই দুই দলের মধ্যে ঐতিহাসিক অনেক পার্থক্য রয়েছে, যেভাবে আবু জাহেল ও আবু তালেবের মধ্যে ইসলামের প্রতি অবস্থান ছিল একেবারেই আলাদা। যদি কেউ এদেরকে এক পাল্লায় মাপে, তা হলে বড় জালেম আর কেউ হতে পারে না।”
এদিন তিনি ছাত্রদল আয়োজিত হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং ইসলামি শক্তির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। তবে যদি এই দুটি শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়, তবে বাংলাদেশ বিপন্ন হতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তি যদি শক্তিশালী হয়, যারা বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলতে চায়, তারা দেশের স্বাধীনতার শত্রু।”
মামুনুল হক বিএনপির রাজনীতি নিয়ে বলেন, “বিএনপি আবু তালেবের মতো, যে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন কিন্তু ইসলামিক রাজনীতির অনুসারী ছিলেন না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আবু জাহেলের মতো, যারা ইসলামের বিরোধিতা করেছিল।” এ মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ভূমিকা ইসলামী রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির বিভিন্ন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “গত ২০ বছরে ছাত্ররাজনীতিতে যে অপশাসন হয়েছে, তাতে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণা বেড়েছে। তবে ৫ আগস্টের পর জাতীয় রাজনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, তা ছাত্ররাজনীতিতেও এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “মেধাবী ছাত্ররা এখন নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে রাজনীতি করছে, এবং ছাত্রদল এ ধরনের অনুষ্ঠান পরিচালনা করছে।”
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “এ ধরনের কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা আমাদের ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও নজর দেওয়া হবে।”
মামুনুল হক আরও বলেন, “মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। ভবিষ্যতে যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন, তাদের উচিত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া।”
তিনি বিশেষভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “কিন্তু আমাদের লক্ষ্য একটাই, তা হলো জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। দেশের রাজনীতিতে ছাত্রদল একটি নতুন দৃষ্টিকোণ নিয়ে উঠে আসছে এবং জাতীয়তাবাদী শক্তির সহযোগিতায় আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে।”
এসময় ছাত্রদলের নেতারা একযোগে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেন।