শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা শহীদের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের দাবিতে আশাশুনিতে মানববন্ধন এবং প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা আনোয়ার হোসেন স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আশাশুনি প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এস কে হাসান সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য বুধহাটা আঞ্চলিক প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান ইকবাল মামুনের সঞ্চালনায় মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জি, ডিবিসি টেলিভিশনের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি বেলাল হোসেন, স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সদস্য মাহমুদ হাসান, সাবেক ভাই চেয়ারম্যান ও জজ কোর্টের এপিপি অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, জামাত নেতা মাওঃ মোশাররফ হোসেন, আশাশুনি প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জিএম মুজিবুর রহমান, বিএনপি নেতা কবির আহমেদ ঢালী, বিএনপি নেতা রফিকুজ্জামান বকুল, বুধহাটা দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি আনারুল ইসলাম, আহসান হাবিব, বাজার ব্যবস্থাপনার কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টুটুল হোসেন, শফিকুল ইসলাম, বিএনপি নেতা শওকত হোসেন, জয়নাল হোসেন, বুধহাটা আঞ্চলিক প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত, সাংবাদিক বাবুল হোসেন, আবু হাসান চঞ্চল, ফারুক হোসেন, ডাঃ মোশাররফ হোসেন প্রমূখ।
বক্তাগণ বলেন, শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৩০ সালে বুধহাটা গ্রামে নানার বাড়িতে আনোয়ার হোসেন জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল কনুই গাজী ও মায়ের নাম পরীজান বিবি। তিন ভাইয়ের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ছিলেন সবার বড়। মেধাবী আনোয়ার হোসেন বাড়ি সংলগ্ন বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। এরপর বুধহাটা বি.বি.এম কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়ার একপর্যায়ে তিনি খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৪৬ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে খুলনার বিএল কলেজে পড়াশুনাকালীন ভাষা আন্দোলনে যোগদেন। তরুণ আনোয়ার হোসেন ভাষা আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুলনার তৎকালিন গান্ধী পার্কে (বর্তমানে হাদিস পার্ক) ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ইস্তেহার পাঠ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েকদিন পর তিনি মুক্তি পান। পরে ভাষা আন্দোলনের মিছিল থেকে ১৯৪৯ সালে পুলিশ তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে কোতয়ালী থানায় রাখা হয়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী কারাগারে। সেখানে পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন তিনি। একপর্যায়ে ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলে খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালানো হয়। তাতে সাতজন কারাবন্দি নিহত হন। তার মধ্যে ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন অন্যতম। তাই আমরা বিশ্বাস করি মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন দেশের প্রথম ভাষা শহীদ। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে তার কোন স্বীকৃতি নেই। তাই আমাদের দাবি শহীদ আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হোক। এছাড়া আশাশুনি সরকারি কলেজের নাম ‘শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন সরকারি কলেজ’ নামে নামকরণ করা, সাতক্ষীরা, আশাশুনি, বুধহাটাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক তার নামে নামকরণ করা এবং সরকারিভাবে ট্রাস্ট গঠন করার দাবী জানান হয়। মানববন্ধন শেষে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কৃষ্ণা রায়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।