আলুর কাংখিত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা

এফএনএস (মোরশেদ-উল-আলম; চিরিরবন্দর, দিনাজপুর) : : | প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম
আলুর কাংখিত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা

চিরিরবন্দরের চাষিরা আলুর কাংখিত দাম পাচ্ছেন না। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকে নেমে এসেছে আলুর দাম। কেজি প্রতি ২৫ টাকা খরচ করে ১৮ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হওয়ায় বিঘা প্রতি তাঁদের বড় অঙ্কের টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষকেরা বলছেন, সার, কীটনাশক ও দিনমজুরের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আলুর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে। ফলে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী আলু বিক্রি করে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনছেন তাঁরা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর আলুতে ভালো লাভ হওয়ায় এবার আবাদ বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। উপজেলার নান্দেড়াই এলাকার কৃষক সাজ্জাদ হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন তিনি। তাতে তাঁর বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৭৫-৮০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আগাম জাতের এক বিঘা (৫০ শতক) জমিতে আলু উৎপাদিত হয়েছে ২৪০০ কেজি বা ৬০ মণ।। প্রতি কেজি মাঠে ব্যবসায়ীরা ১৮ টাকা দরে কেনেন। তাতে বিঘা প্রতি আলু বিক্রি হয় ৫৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে তার ৪ বিঘা জমিতে লোকসান হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আলুতে লোকসান হওয়ার কারণ জানিয়ে একই এলাকার কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ বছর আলুবীজ ও সার বেশি দামে কিনতে হয়েছে। ফলে বাজারে ২৫ টাকা  বা ২৬ টাকা দরে বিক্রি করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। অমরপুর ইউনিয়নের কৃষক শামসুল ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আরও ১৫-২০ দিন পর আলু তুলব ভেবেছিলাম। কিন্তু অন্য ফসল লাগানোর জন্য তড়িঘড়ি করে আলু তুললাম। তাতে বিঘা প্রতি ৫-৬ মণ কম আলু পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে দামও কম। যেসব মহিলারা আলুগুলি তুলে দেন, তাদের বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা করে দিতে হয়।  মোকলেছ নামের আরেক কৃষক বলেন, গত বছর ৩ বিঘা জমির আলু আবাদে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এ বছর একই জমিতে ১০ হাজার টাকা লোকসান হলো। অমরপুর এলাকার আজিজুল হক শাহ নামের আলুচাষি বলেন, নিম্ন দরের কারণে সংরক্ষিত আলু বাজারজাত করা সম্ভব না হলে বিপুল আলু অবিক্রীত থেকে যাবে এবং আলু ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। সন্তোষপাড়া এলাকার মোকছেদ আলী নামের আরেক কৃষক বলেন, ৫০ শতক জমিতে আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে না পারলে লোকসান হবে। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বর্তমানে কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ যেখানে ২৫/২৬ টাকা, সেখানে ২০/২২ টাকায় সে পণ্য বিক্রি হওয়ায় হতাশ কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলায় ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে; যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১ শত ৩৫ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে ৫০/৫৫ হেক্টর জমিতে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা শারমিন বলেন, গত বছর আলুর চাহিদা বেশি ছিল। সে তুলনায় জোগান ছিল কম। তাই ভালো দাম পেয়েছে কৃষক। গতবারের দেখাদেখি এবার আবাদ বাড়িয়ে একটু বেকায়দায় পড়েছেন চাষিরা। তবে সমস্যা উত্তোরণ হয়ে যাবে আশা করা হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে, বিক্রির পর অতিরিক্ত আলু হিমাগারে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে