কমেছে সরকারি গুদামে চালের মজুদ। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশে প্রায় ১৩ লাখ টন চালের মজুদ ছিল। আর ২৮ আগস্টের মধ্যে সরকারিভাবে সংগ্রহ কার্যক্রমের কারণে ছালের মজুদ বেড়ে ১৪ লাখ ৫৬ হাজার টনেরও বেশি দাঁড়ায়। কিন্তু তিন মাসের মাথায় ১৯ নভেম্বরের মধ্যে তা ৮ লাখ ৮ হাজার টনে নেমে আসে। বর্তমানে দেশের সরকারি খাদ্যগুদামগুলোয় চালের মজুদ ৭ লাখ ৭২ হাজার টনের কিছু বেশিতে নেমে এসেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ শতাংশ চালের মজুদ কমেছে। মূলত সময়মতো আমদানি করতে না পারা এবং সরকারি বিভিন্ন খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রির কারণে সরকারি মজুদ দ্রুত কমে আসছে। তবে সরকারিভাবে আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলে গুদামে মজুদের পরিমাণ আবার বাড়বে। বরং এ মুহূর্তে খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে চাল খোলাবাজারে স্বল্পমূল্যে বিক্রি অব্যাহত রাখায় বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে। সরকারিভাবে দেশে গত কয়েক মৌসুমে রেকর্ড উৎপাদনের দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক দফায় চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। গত অর্থবছরে চাল আমদানি না করা হলেও চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত বেসরকারিভাবে প্রায় ১০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। তবে সরকারিভাবে এখনো চাল আমদানি শুরু হয়নি। আর আমদানির পরিমাণ কম হওয়ায় সরকারি গুদামগুলোকে এখন অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, বাজারে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চালের দাম কমছে না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে চালের ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এখন সরকারিভাবে চাল আমদানিতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। তবে আরো অন্তত এক মাস আগে এ উদ্যোগ নেয়া হলে বাজার স্থিতিশীলতায় আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারতো। আর চালের মজুদ বৃদ্ধিতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে চালের বাজারমূল্য অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। এবার অন্তত ১৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ প্রয়োজন। যদিও চলতি আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হলে মজুদ আরো বাড়বে। সূত্র আরো জানায়, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারি গুদামের চাল খোলাবাজারে চাল বিক্রির কারণেই মজুদ দ্রুত কমছে। আর বাজারে অস্থিরতা রেখে মজুদ রেখে লাভ নেই। বরং খোলাবাজারে চাল বিক্রির মাধ্যমে বাজারের উত্তাপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এখন চাল আমদানি না করে আরো এক মাস আগে থেকে চাল আমদানি করতে পারলে বাজার কিছুটা হলেও স্থিতিশীল রাখা যেত। কিন্তু সময়মতো চাল আমদানি না করে এখন ভরা মৌসুমে চাল আমদানির মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতি হতে পারে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বেশি। আর বেসরকারি পর্যায়ে আমদানির পাশাপাশি সরকারিভাবেও আমদানি করা প্রয়োজন ছিলো। দেশে মূলত মোটা, মাঝারি ও সরু এ তিন ক্যাটাগরির চাল পাওয়া যায়। মোটা চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, চায়না ইরি, হাইব্রিড ও আমদানীকৃত মোটা চাল। মাঝারি চালের জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে পাইজাম, লতা, ব্রি২৮ ও পারিজা। আর সরু চালের মধ্যে রয়েছে নাজির, কাটারীভোগ, জিরাশাইল ও মিনিকেট। এর মধ্যে তিন মাস আগে এগুলোসহ প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছিল। সেক্ষেত্রে বন্যা ও মিল মালিকদের কারসাজির কথা বলা হলেও সরবরাহ সংকটে বাজারে দাম কমানো যায়নি। তবে নতুন ধানের চাল বাজারে আসতে শুরু করায় গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম কমেছে কেজিতে ২-১ টাকা। তবে মাঝারি ও সরু চালের দাম এখনো কমেনি। বাজারে বর্তমানে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকায়। এক মাস আগে এ দাম ছিল ৫২-৫৫ টাকা। মাঝারি আকারের চালের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৫৯-৬৫ টাকায়, যা এক মাস আগেও ছিল ৫৫-৬২ টাকা। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৮-৮০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৬৪-৮০ টাকা। সাধারণত আমন ও বোরো দুই মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত আমন মৌসুমে চাল উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টন, যা বিগত যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। এবারো দেড় কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আর সরকারের পক্ষ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ টন। এছাড়া গত বোরো মৌসুমেও রেকর্ড চাল উৎপাদন হয়েছিল। ২ কোটি ২২ লাখ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছিল ২ কোটি ২৪ লাখ টন। চাল উৎপাদনের এমন রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ায় গত অর্থবছর কোনো চাল আমদানি করতে হয়নি। তবে দেশে সাম্প্রতিক বন্যায় আমন ও রোপা আমনের ফলন কিছুটা হ্রাসের আশঙ্কা করা হয়েছিল। আর বাজারে সরবরাহ সংকট থাকায় চাহিদা মেটাতে সরকারি-বেসরকারিভাবে চাল আমদানিও করা হচ্ছে। অন্যদিকে সার্বিক বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান জানান, নতুন চালের মৌসুমে চাল সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজির দাম ৪৭ টাকা নির্ধারিত করায় এবার ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তাই চালের মজুদ এখন বাড়তে থাকবে। তাছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি হচ্ছে। সরকারি পর্যায়েও দেড় লাখ টন চাল আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিলেও ৬২ শতাংশ শুল্ক থাকায় বেসরকারি খাত আমদানিতে উৎসাহ দেয়ায়নি। পরবর্তী সময়ে শুল্ক মাত্র ২ শতাংশে নামিয়ে আনায় এখন তারা আমদানি করছে।