গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর ১২৭ জন বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধাপে ধাপে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়ার পর মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি পেয়ে স্বজনদের সঙ্গে আবেগঘন পরিবেশে সাক্ষাৎ করেন তারা।
সকাল থেকেই কারাগারের ফটকের সামনে ভিড় জমান মুক্তিপ্রাপ্তদের স্বজনরা। দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার আনন্দ আর কষ্টের স্মৃতিতে সবার চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। ঢাকা সদর ব্যাটালিয়নের সিপাহি জামাল উদ্দিন খানের মেয়ে জুয়েনা জামাল ঐশী বলেন, “আমার বাবাকে আমি চিনি না। যখন আমি এক বছরের শিশু, তখন বাবাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। আজ ১৭ বছর পর বাবার মুখ দেখতে পাব-এই অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না।
জামিনে মুক্তি পাওয়া ময়মনসিংহ-৪৫ ব্যাটালিয়নের সিপাহি এনামুল অভিযোগ করে বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার আমাদের মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে। আমরা যারা নিরপরাধ, তাদের পুনরায় চাকরিতে বহাল এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা সদর ব্যাটালিয়নের সিপাহি আবু হাসান জানান, “বিদ্রোহের সময় আমার চাকরির বয়স ছিল মাত্র ছয় মাস। পিলখানার পাঁচটি গেটও চিনতাম না, অথচ আমাকে আসামি করা হয়েছে। সিনিয়র স্যারদের হত্যার দায়ে ১৬ বছর জেল খেটেছি। সরকারের কাছে আমাদের হারানো সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় ১৩ জন, কারাগার-১ থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় ২৫ জন এবং কারাগার-২ থেকে দুপুর দেড়টায় ৮৯ জন বিডিআর সদস্যকে মুক্তি দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডে বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার বিচার শুরু হয়। সম্প্রতি ২০ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর অস্থায়ী আদালত হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত ও যাদের বিরুদ্ধে আপিল হয়নি, এমন দুই শতাধিক আসামিকে জামিন দেন।
মুক্তিপ্রাপ্তরা তাদের অভিযোগের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন, যেখানে তাদের মতো নিরপরাধ ব্যক্তিদের আর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে না হয়।