চট্টগ্রাম শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ ওরফে ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পরপরই ফেসবুক লাইভ করে আলোচনার তুঙ্গে আসেন স্ত্রী তামান্না শারমিন। দেখান ‘টাকার গরম’। পাশাপাশি দেন হুমকিও। যারা তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং করতে সহযোগিতা করেছে তাদের দেখে নিবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি এই লাইভে। বেশ ফুরফুরে মেজাজে লাইভে তিনি সমালোচনাকারীদের জন্য ‘এক বালতি সমবেদনা’ জানিয়েছেন। আর স্বামীর ‘সাপোর্টারদের’ জন্য চেয়েছেন দোয়া। বলেছেন, ‘খেলা যারা শুরু করেছে এখন তাদের পালানোর দিন। খেলাটা তারা শেষ করবেন। আর টাকার বান্ডিল ছিটিয়ে ১৪ দিনে স্বামীকে তিনি জামিন করিয়ে নিয়ে আসবেন।’ তার সেই লাইভ দেশ জুড়ে ভাইরাল হয় মুহূর্তেই। গণমাধ্যমেও তামান্না শারমিনকে সাজ্জাদের স্ত্রী হিসেবে ব্যাপক প্রচার করা হয়। সোমবার তামান্না শারমিন আরো একটি ভিডিওতে তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রয়োজনে আমার স্বামী সাজ্জাদের জন্য ভিক্ষা করে হলেও তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করবো। আপনারা কেন আমার পিছে লাগছেন, আমি তো আপনাদের ক্ষতি করি নাই, ফেসবুকে কিছু কমেন্ট করিও নাই। অপরদিকে, তামান্না শারমিন সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী পরিচয় দিলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সাজ্জাদের স্ত্রী নন। তার সঙ্গে ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে হওয়ার কোনো নথি নেই। বিয়ে হলেও দেশের আইনকানুন মেনে হয়নি -এমনটাই বোয়ালখালী এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তামান্না শারমিনের পুরো নাম তামান্না আহমেদ। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের ডানহাত হিসেবে পরিচিত অমিত মুহুরীর বান্ধবী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৩০শে মে অমিত মুহুরী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আরেক আসামির ইটের আঘাতে নিহত হন। তার সঙ্গে তামান্নার দীর্ঘ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তামান্না শারমিন নগরীর এমইএস কলেজে পড়াকালীন নিজেও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ওই সময় থেকেই অমিত মুহুরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তামান্না। তামান্না শারমিনের বিরুদ্ধে আছে বহু অভিযোগ। একেকবার একেক যুবককে কথিত বিয়ে করার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। তামান্নার আগের ঘরের এক সন্তানও রয়েছে। তাকে অনেকে ‘লেডি ডন’ হিসেবে চিনে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মেয়ে তামান্না ছেলেদের মোটরসাইকেল চালানো ও কথাবার্তায় কঠোরতার জন্য লেডি ডন পরিচিতি পান। সাজ্জাদকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর গ্রেপ্তারকারীদেরও দেখে নেয়ার হুমকি দেন শারমিন। বলেন, ‘এতদিন আমরা পালিয়ে ছিলাম, এবার তোমাদের পালানোর দিন শুরু। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে জামাইকে আমার কাছে নিয়ে আসবো ১৪ দিনের মধ্যে।’তামান্নার পোস্ট করা ভিডিও থেকেই তাদের অবস্থান নিশ্চিত করে পুলিশ। ভিডিওতে থাকা একটি গাড়ি শনাক্ত করে বিআরটিএ থেকে মালিকের তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ। এরপর চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী অক্সিজেন মোড় থেকে রাউজান গিয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। এর আগে গত ১২ই ডিসেম্বর সাজ্জাদকে ধরতে গিয়ে তামান্না শারমিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে পুলিশ। পরে ৬ই জানুয়ারি তিনি জামিনে বের হন। এরপর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান, আরও দুই এসআই ও অন্যান্য কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তামান্না শারমিন। সেই মামলায় তিনি ওসির বিরুদ্ধে নিজের ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ করেন। এ নিয়ে ফেসবুকে লাইভেও আসেন তিনি। কিন্তু ভ্রূণ হত্যার কোনো প্রমাণ তিনি উপস্থাপন করতে পারেননি।
ওদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ কোন দলের রাজনীতি করেন তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকেই বলেন, তিনি শুরু থেকে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলালের সঙ্গে তার একাধিক ছবি রয়েছে। এই সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় প্রায় ১৫ টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।