জাতীয় স্বার্থে সংযম ও সচেতনতার আহ্বান!

রাজু আহমেদ : | প্রকাশ: ২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:৪১ এএম : | আপডেট: ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
জাতীয় স্বার্থে সংযম ও সচেতনতার আহ্বান!
রাজু আহমেদ

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জায়গায় তেরোশো বছর আগে মসজিদ ছিল, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ছিল মুসলমানদের ইদগাহ- এমন দাবি শুনলে একজন সনাতন হিসেবে কেমন লাগবে? সনাতন বাদ দেন যদি একজন সচেতন শিক্ষিত মানুষেও শোনে সে কী বলবে? বলবেন তাজা গাঁজা খেয়েছি! উত্তর প্রদেশের বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ করে ঠিক এমন কাজটাই করা হয়েছে। রাম মন্দির এবং বাবরি মসজিদের ইতিহাস ছাপিয়ে এখন লালকেল্লা, দিল্লি শাহী জামে মসজিদ, নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার নিয়ে আবার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। মসজিদের মধ্যে লাঠিপেটা, রক্তারক্তি- নতুন কিচ্ছা নয়। তা হোক গে! বিজেপির শাসনামলে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। বেড়েছে ধর্মীয় উগ্রতা। ভারতে কি হচ্ছে আর কি না হচ্ছে তাতে আমার কিছুই আসে যায় না। বাংলাদেশের জমিনে প্রত্যেকটি মানুষ মাতৃকোলের মত নিরাপদে থাকবে। থাকতেই হবে। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা মুসলিম- নাগরিক হিসেবে কেউ বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাবে আর কেউ চাপে থাকবে- এমন কোন সুযোগ নাই। যারা বাড়াবাড়ি করছেন তারা সাবধান হোন এবং যারা দুর্বলতার সুযোগে কোন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অংশ হচ্ছেন তারাও ফিরে আসুন। দেশের স্বার্থে সবাই সজাগ ও নমনীয় থাকুন। যতদিনে ভারত ও পাকিস্তান প্রীতি বন্ধ না হবে ততদিন বাংলাদেশ নিরাপদ হবে না। যারা পাকিস্তানকে মামু-খালুর দেশ আর ভারতকে মা-খালার মাটি মনে করেন তারা বিরত হোন। যে মাটি আপনাকে জন্ম দিয়েছে সে মাটিকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন। দেশপ্রেম না থাকলে সে মানুষ হায়েনার চাইতেও অধম। দেশের স্বার্থের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে দেশের সাথে যারা গাদ্দারি করে তারা নপুংসক। ধর্মভিত্তিক মসজিদ-মন্দির হয় কিন্তু ধর্মভিত্তিক দেশ নির্মাণ সম্ভব নয়। উচিতও নয়। এই দেশ সব মানুষের- কুলিদের, মজুরের ফকিরের! আইনজীবী আলিফকে যারা খুন করেছে তার সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসীদের ধর্ম পরিচয় খুঁজতে যাওয়া বাতুলতা। প্রত্যক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের ফাঁসি হোক। তবে এই খুনকে যদি কোন সংগঠন, কোন ধর্ম কিংবা কোন ব্যক্তি বৈধতা দিতে যুক্তি দিয়ে ডিফেন্ড করতে চায়, খুনির পক্ষে দাঁড়ায় তবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। যারা বাংলাদেশকে বসবাসের জন্য অনিরাপদ মনে করে তাদের একটা তথ্য জানা থাকা দরকার। ভারতে সমগ্র জনসংখ্যার ১৪% মুসলিম সংখ্যালঘু। অথচ সেদেশে জেলে যারা আছে সেই মোট বন্দীদের ১৯%+ মুসলিম। হাঁড়িতে গোমাংস ছিল- এমন অভিযোগেও পরিবারসহ সবাইকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কাশ্মীরে কি হচ্ছে, গুজরাটে কি হয়েছে কিংবা মহারাষ্ট্রের দৃশ্য আমাদের অজানা নয়। যারা পাশের দেশ নিয়ে কথা বলে তাদের নিজেদের দেশের দিকেও একটু নজর দেওয়া দরকার। ন্যায্যতা তো কেবল পাশের বাড়ির বিষয় নয়! কেবল ভোট হাতানোর জন্য মিথ্যাচার মানবসভ্যতার ওপর বর্বরতার শামিল। নিজের দেশটাকে ভালোবাসতে হবে। ধর্ম-বর্ণ, গোত্র-জাতি নির্বিশেষে বাংলাদেশ আমাদের সকলের। বাংলাদেশের পতাকা কলকাতায় অবমাননা হয়েছে- এতে যদি কোন বাংলাদেশির বুকে ব্যথা না লাগে তবে আত্ম-জিজ্ঞাসা জাগ্রত হওয়া উচিত। শিশু বলাৎকারের অভিযোগে একজন মানুষ একটা আন্তর্জাতিক ধর্ম সংঘ থেকে বহিষ্কার হয়েছে অথচ সেই মানুষটির স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়া কিছুটা বিচিত্রই বটে। তাও যদি সে অন্যায়ভাবে আটক হয়, আইন তাকে যাতে ন্যায় বিচার দেয় তার উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রকে থ্রেট করা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া পাপ। আর পাপের শাস্তি সব ধর্মেই প্রায় কাছাকাছি। ইসলাম ধর্মে তো গুজবের জন্য আগুনের কাঁচি দিয়ে জিহ্বা কর্তন করা হবে। এরপরের বার অন্যান্য ধর্মের মিথ্যার শাস্তি জেনে পাঠকদের জানিয়ে দেবো। কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় রাজনৈতিকদলের গুটি হবে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। তারাও কারো অন্যায় প্রতিষ্ঠায় ব্যবহৃত হবে এটা অনভিপ্রেত। বাংলার মাটি বাংলার জল বিশ্বাসঘাতকতা শেখায় না। ভারতের কতিপয় উগ্রবাদী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মানচিত্র দ্বিখণ্ডিত করা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা এবং খুলনা নিয়ে যাওয়ার দাবি শুনেও যারা প্রতিবাদ মুখর হয়নি তাদের হঠকারিতার জন্য এক আকাশ দুঃখ। কেবল ভোটের রাজনীতির জন্য একটা দেশকে নিয়ে এমন ছেলেখেলামূলক প্রচার হবে অথচ এদেশের সচেতন মহল প্রতিবাদ জানাবে না- মানতে কষ্ট হয়। বাংলাদেশটা আমাদের সবার হয়ে উঠুক। পাক-ভারতের সীমান্তের ওপার প্রীতি থাকলেও সেটা ত্যাগ করুণ এবং ভাবনায় স্বদেশী মানচিত্রে ফিরুন। দেশের নিরাপত্তা প্রশ্নে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পরীক্ষায় জীবন বাজি রাখতে এ মাটির সন্তান দ্বিধাহীন হবে না এবং দ্বিতীয়বার ভাববে না। কাজেই সকল জঙ্গি এবং জঙ্গির দোসর সাবধান। উগ্রতা কাম্য নয়; সমর্থনযোগ্য তো নয়-ই। লাল-সবুজের পতাকার ওপর একটুও দাগ সহ্য করা হবে না। শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও বাংলাদেশের মানচিত্র, সার্বভৌমত্ব ও সম্মান রক্ষায় শহিদি আত্মত্যাগ করতে সদা প্রস্তুত। কাজেই দেশি ও ভিনদেশি ষড়যন্ত্রকারী ও শত্রুরা সাবধান। 

লেখক : রাজু আহমেদ; কলাম লেখক 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW