ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্ত ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সহিংসতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সংগঠিত হয় এবং এতে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ একাধিক ছাত্রনেতার নাম উঠে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যদের সমন্বয়ে সোমবার (১৮ মার্চ) অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ এবং রেজিস্ট্রার মুন্সী শামসউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীসহ আরও বহিরাগতদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সত্যানুসন্ধান কমিটি। গত ৮ অক্টোবর এই কমিটি গঠন করা হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপণ।
সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাদ্দাম হোসেন এবং শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হামলায় সশরীরে উপস্থিত ছিলেন, এমন দাবি করেছে কমিটি।
তালিকায় আরও রয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল পর্যায়ের নেতাদের নাম, যাদের মধ্যে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, বিজয় একাত্তর হল, সূর্যসেন হল, বঙ্গবন্ধু হল, জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন বিভাগের নেতারা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাবেক শিক্ষার্থীরও নাম রয়েছে, যারা হামলায় জড়িত ছিলেন।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা নেতৃত্ব দেবেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম। এই তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এছাড়া, তদন্ত প্রতিবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের হাতে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সাবেক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে একাডেমিক সনদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে, কারণ তাদের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনটি অনুসারে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত হামলার মধ্যে সবচেয়ে হতাশাজনক ছিল নারী শিক্ষার্থীদের উপর আক্রমণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের পাশে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা। হামলার কারণে চিকিৎসার কাজে বাধা সৃষ্টি করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
এ ঘটনা দেশের একাডেমিক পরিবেশে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতির পাশাপাশি সুশাসনের প্রয়োজনীয়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।