ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ২৪ ঘন্টার মহা যানজট!

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : : | প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫৫ এএম : | আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ২৪ ঘন্টার মহা যানজট!

ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল আশুগঞ্জ অংশে গত ২৪ ঘন্টা ধরে মহা যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে সড়কের জনজীবন। মাত্র ১৭-১৮ কিলোমিটার পথ আসতে লাগছে ১২/১৩ ঘন্টা। চরম দূর্ভোগে নাকাল দূরপাল্লার সহস্রাধিক যানবাহনের লাখ লাখ যাত্রী। গাড়ির সিটে কাটছে তাদের রাত দিন। প্রস্রাব পায়খানার সীমাহীন কষ্টের কথা বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন অনেক যাত্রী। সড়কের পাশের ছোট হোটেল গুলোতে খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছে নিমিশেই। সড়কে থেকেই তারা পাচ্ছেন স্বজনের লাশ দাফনের সংবাদ। সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী গাড়ি গুলোতে চলছে শুধু হ্যাঁ হুতাশ। শিশুরা করছে চিৎকার চেঁচামেচি। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে চলছেন বিভিন্ন বয়সের নারী পুরূষ ও শিশুরা। আয় রোজগার কমে গেছে সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা গুলোর। যানজট নিরসনে দিন রাত সড়কে পরিশ্রম করছেন হাইওয়ে ও সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ সদস্যরা। পুলিশ গত দুইদিনের তীব্র যানজটের জন্য দায়ী করছেন বিএনপি’র লং মার্চকে। সরজমিন অনুসন্ধান, হাইওয়ে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মহাসড়কের সরাইল আশুগঞ্জ ও সদরের অংশে ৬ লেন ও ৪ লেন কাজের কারণে মাঝেমধ্যে যানজট লেগে থাকে। সেই যানজট হয় স্বল্পস্থায়ী। কিন্ত বিএনপি’র ডাকা ঢাকা থেকে আগরতলা বর্ডার পর্যন্ত লং মার্চের কারণে গত বুধবার সকাল থেকেই সরাইলের বিশ্বরোড মোড়ের তিন দিকে মহাসড়কে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। বুধবার সকাল থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত সরাইলের বিশ্বরোড মোড় থেকে মাধবপুর পর্যন্ত থমকে দাঁড়ায় সকল প্রকার যানবাহন। একই অবস্থা আশুগঞ্জ ও বিশ্বরোড-সিলেট-ময়মনসিংহ সড়কেও। ঘন্টায় একটি গাড়ি ২ কিলোমিটারও চলতে পারছে না। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই রাত কাটিয়েছেন গাড়ির সিটেই। রাত ৮টায় আশুগঞ্জের বাহাদুরপুর ঘুমিয়েছিলেন জেগে দেখেন এখনো সরাইলের শাহবাজপুরেই আছেন। কেউ ইসলামাবাদে। কেউ কুট্রাপাড়ায়। কেউ রাজামারিয়া কান্দি, রামপুরা, চান্দুরা ও মাধবপুর। সীমাহীন কষ্টে রাত কেটেছে যাত্রী ও চালকদের। অনেক যাত্রী আশপাশে কোন খাবার হোটেল না পেয়ে অনাহারেই থেকেছেন। অনেকে ছোট হোটেল থেকে অল্প পরিমান ভাত তরকারি ম্যানেজ করেছেন। আবার অনেকে কনফেকশনারী দোকার থেকে রূটি কলা বিস্কুট খেয়ে ক্ষিধা নিবারণ করেছেন। অনেককেই থাকতে হয়েছে উপোষ। শীতের রাতের ঘন কূঁয়াশা আর অন্ধকারে অনেকে গাড়ি থেকে বেরই হননি। নিজের ও বাচ্চার প্রস্রাব পায়খানার করূন কাহিনী বলতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। গতকাল সকালে যানজটের চিত্র আরা তীব্র হয়েছে। কুট্রাপাড়া মোড় থেকে মাধবপুর পর্যন্ত গাড়ি নড়ছেই না। শাহবাজপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা থেকে সিলেটগামী এনা পরিবহনের যাত্রী পান্না আক্তার (৩৭) বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে বুধবার রাত সোয়া ১২ টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছি। যাব সিলেটে। আশুগঞ্জ পৌঁছেছি রাত সাড়ে তিনটায়। রাত ৪ টায় আশুগঞ্জ থেকে রওনা দিয়ে এখন আড়াইটায় আমরা মাত্র শাহবাজপুরে দাঁড়িয়ে আছি। ২০-২২ কিলোমিটার আসতে সময় লেগেছে ১০ ঘন্টার বেশী। রাতে গাড়িতে কতটুকু আরামে ছিলাম আপনারাই ভাবুন। ইউনিক কোচের যাত্রী ব্যবসায়ি শরীফুল আলম বলেন, বুধবার রাত ১২টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ২টার দিকে আশুগঞ্জ এসেছি। রাত ২টার আশুগঞ্জ থেকে সিলেটের উদ্যেশ্যে রওনা দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ২টায় শাহবাজপুর প্রথম গেইটেই আছি। ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে এই ২০-২২ কিলোমিটার পথের তীব্র যানজট যে কত ভয়াবহ যন্ত্রণা দিচ্ছে বলে বুঝাতে পারব না। কবে দূর্বীসহ এই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব। আরেক যাত্রী রাতে স্ত্রী সন্তানের প্রস্রাব পায়খানার কষ্ট ও ভুগান্তির কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ট্রাক চালক মো. রনি বলেন, ঢাকা যাব। রাত ১১ টায়  তেলিয়াপাড়া থেকে রওনা দিয়ে ফজরের আযান দিয়েছে মাধবপুরে। কিন্তু জ্যামের শেষ নেই। এখন বেলা ১টায় দাঁড়িয়ে আছি সরাইলের ইসলামাবাদে। মাধবপুর থেকে এখানে আসতে লেগেছে প্রায় ৮ ঘন্টা। রাতে খাবারের অনেক কষ্ট করেছি। আর ভালো লাগছে না। সিলেটগামী ট্রাক চালক মো. সুমন মিয়া গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্বরোড মোড়ে এসে বলেন, আশুগঞ্জ থেকে সকাল ৭ টায় রওনা দিয়ে বিকাল আড়াইটায় বিশ্বরোড মোড়ে এসেছি। সড়কে এখনও তীব্র জ্যাম। একাধিক সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক বলেন, আশুগঞ্জ থেকে মাধবপুর পর্যন্ত মহাসড়কের আশপাশের অগণিত চালক গত দুইদিন ধরে অনেকটা বেকার। কারণ তীব্র যাজটের কারণে তারা সড়কেই উঠতে পারছেন না। এ ছাড়া গ্রামীণ সড়কেও যাত্রীর সংখ্যা একেবারেই কম। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মারগোফ তৌহিদ বলেন, তীব্র এই যানজট মূলত গত বুধবারের লং মার্চের কারণে। কারণ একই দিনে একই সময়ে হঠাৎ করে আমাদের এলাকার সড়ক গুলোতে ৮-১০ হাজার গাড়ি প্রবেশ করেছে। আমাদের এলাকার গাড়ি গুলো তখন যেখানে ছিল সেখানেই আটকা পড়েছে। নতুন ১০ হাজার গাড়ি যুক্ত হয়ে সড়কের জায়গা দখল করে যানজটকে তীব্র থেকে আরো তীব্রতর করে ফেলেছে। জেলা পুলিশ আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। এছাড়া সদর, আশুগঞ্জ ও সরাইল থানা পুলিশও আমার সাথে সড়কে কাজ করছেন। আজ রাতের (গতকাল) মধ্যে সড়ক আবার আগের মত স্বাভাবিক হবে আশা করছি। 


0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে