বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কাছে বাংলাদেশের অনেক কিছু বেচে দিলেও তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি। শুধু তিস্তাই নয়, ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে ভারত বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এর ফলে বাংলাদেশের কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছে না, জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না এবং সাধারণ মানুষ জীবন-জীবিকা সংগ্রামে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।
সোমবার বিকেলে রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুর অঞ্চলের ১১টি পয়েন্টে একযোগে ৪৮ ঘণ্টার এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “তিস্তা বাঁচানোর ডাক আমাদের অন্তরের ডাক। আমরা ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আমাদের ছেলেরা রক্ত দিয়েছে। ৩৬ দিনের সংগ্রামের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়েছিলেন। ভারত একদিকে আমাদের পানি দিচ্ছে না, অন্যদিকে আমাদের শত্রু শেখ হাসিনাকে দিল্লিতে রাজার মতো সম্মান দিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে তিনি আওয়ামী লীগারদের নির্দেশনা দিচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আজকের এই সংগ্রাম আমাদের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। তিস্তাপাড়ের মানুষের এই সংগ্রামকে আর কখনো থামতে দেওয়া হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, তিস্তা নিয়ে আপনাদের মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে, আমরা পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আর যেহেতু আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন।”
ভারতের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইলে আপনাদের আগে তিস্তার পানি দিতে হবে। সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে বড় ভাইয়ের মতো আচরণ বন্ধ করতে হবে। আমরা আমাদের পায়ের ওপর দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের পাওনা বুঝে নিতে চাই। আমরা ভারতকে বন্ধুত্বের চোখে দেখতে চাই, তবে সেটা সম্মানের সঙ্গে।”
তিনি তিস্তা রক্ষার আন্দোলনকে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন এবং বলেন, “এই সংগ্রামের মাধ্যমেই তিস্তার পানির হিস্যা আদায়সহ সব অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা নির্বাচন চাই, কারণ নির্বাচন দিলেই দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।”
এই কর্মসূচির মাধ্যমে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে বিশ্ব জনমত গঠনের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আগামীকাল ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সমাপনী বক্তব্য রাখবেন বলে জানানো হয়।
স্থানীয়দের আশা, তিস্তা রক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই গণজমায়েত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।