নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকানো অদম্য তরুণী আতিকা আক্তার। এখনপড়াশোনার পাশাপাশি করছেন কাঠের গোলার ব্যবসা। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে দু’চোখে স্বপ্নজয়ের আকাক্সক্ষা নিয়ে দুর্বার পথ চলা তার। ভবিষ্যতে বেছে নিতে চান সাংবাদিকতার মতো চ্যালেঞ্জিং পেশাকে। এ পেশায় থেকে দূর করতে চান সমাজের নানা অসঙ্গতি আর বৈষম্য। তুলে ধরতে চান সমাজের অবহেলিত ও নির্যাতিত মানুষের কথা। অংশ নিতে চান দেশের উন্নয়নে। আতিকা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার ভ্যান চালক একরামুল হকের মেয়ে।
পরিবারের দারিদ্রতার বলি হয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীনই বিয়ে দেবার জন্য উঠে পরে লাগে বাবা-মা। কিন্তু নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত বিয়ের পিড়িতে বসতে নারাজ এই কিশোরী। নিজের আত্ম বিশ্বাস আর স্বপ্ন নিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠেকায় নিজের বাল্যবিয়ে। সমাজের নানা কটু কথা আর তিরস্কার উপেক্ষা করে শুরু হয় দুর্বার পথ চলা। এমন সময় প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর আওতায় মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি (এমজেএসকেএস) ও সিএনবি প্রকল্পের আত্মকর্মীমূলক প্রশিক্ষণ ও অনুপ্রেরণায় নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে শুরু করে টিউশনি। এভাবেই মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে এখন ভিতরবন্দ স্নাতক মাহাবিদ্যালয়ে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি দেখাশোনা করেন কাঠের গোলার ব্যবসা। সকাল-বিকালে সময় দেন সেখানেই। যে কাজ একটি মেয়ে মানুষের জন্য অত্যন্ত কষ্টের ও চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এমন সাহসী ও উদ্যোগী হওয়ায় তার প্রতি খুশি এলাকাবাসী।
আতিকা আক্তার জানায়, দরিদ্র পরিবার হওয়ায় ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন থেকেই বিয়ে দেবার জন্য চাপ দেয় বাবা-মা। কিন্তু সে রাজি হয়নি। তার ইচ্ছে সে পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠত করবে। ভবিষ্যতে বেছে নেবেন চ্যালেঞ্জিং পেশা সাংবাদিকতাকে। কলমের আঁচড়ে ফুটে তুলবেন সমাজের নানা অসঙ্গতি। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে অংশ নেবে সেও। দরিদ্রতা আর সকল বাধা পেরিয়ে এখন স্বপ্ন জয়ের হাতছানি তার। আতিকার মা তাহমিনা বেগম জানায়, আতিকা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। সে পড়াশোনর ক্ষেত্রে খুবই মনযোগী। সংসারে অভাব থাকায় আমরা তাকে বিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুতি নেই। কিন্তু সে পড়াশোনা করবে বলে বিয়েতে রাজি হয়নি। এখন সে কলেজে পড়ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি কাঠ গোলার ব্যবসায় সময় দেয় এবং টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজে চালায় এছাড়াও সংসারেও খরচে সহায়তা করে। তারা চায় তাদের মেয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করুক।
মহিদেব যুব সমাজকল্যাণ সমিতির ইয়ুথলিড টেকনিক্যাল অফিসার ইলিয়াস আলী বলেন, আমরা ঝড়ে পড়া কিশোরীদেরকে বাল্যবিবাহের কড়াল গ্রাস থেকে মুক্তি দিয়ে তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে এবং আর্থিক সহযোগিতা ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থকে রেজিস্ট্রেশন নেবার মাধ্যমে ইয়ুথ সংগঠন তৈরি করে নিজেরদের বাল্যবিবাহ ঠেকানোর পাশাপাশি অন্যান্যদের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।