ফুলবাড়ীতে স্মার্ট কার্ড জঠিলতায় দুই মাস মিলেনি টিসিবির পণ্য!

এফএনএস (প্রভাষিকা রীতা গুপ্তা; ফুলবাড়ি, দিনাজপুর) : : | প্রকাশ: ১৮ মার্চ, ২০২৫, ০৮:০২ পিএম
ফুলবাড়ীতে স্মার্ট কার্ড জঠিলতায় দুই মাস মিলেনি টিসিবির পণ্য!

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে টিসিপি পণ্য গ্রহণে স্মার্ট কার্ড জটিলতায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুইমাস থেকে পণ্য পাচ্ছেন না কার্ডধারী নিম্নআয়ের প্রায় ১৯ হাজার পরিবার। পণ্য না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কার্ডধারী পরিবারগুলো। 

তবে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের দাবি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বিতরণের জন্য খাদ্যপণ্য মুজুত থাকলেও শুধুমাত্র স্মার্ট কার্ড জটিলতার জন্য খাদ্য পণ্য বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা যাচ্ছে না।

জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার পৌর এলাকাসহ সাতটি ইউনিয়নের হাতের লেখা টিসিবি’র কার্ডধারী সুবিধাভোগী রয়েছেন ১৮ হাজার ৮৭৯ পরিবার। এরমধ্যে পৌরএলাকায় ৩ হাজার ১৫৪ টি। এছাড়াও উপজেলার ১নং এলুয়ারি ইউনিয়নে ২ হাজার ৬১৮ টি, ২নং আলাদীপুর ইউনিয়নে ২ হাজার ২৬২ টি, ৩নং কাজিহাল ইউনিয়নে ২ হাজার ১৯০ টি, ৪নং বেতদীঘি ইউনিয়নে ২ হাজার ২৭৫ টি, ৫নং খয়েরবাড়ী ইউনিয়নে ১ হাজার ২৮০ টি, ৬নং দৌলতপুর ইউনিয়নে ১ হাজার ৫১৪ টি এবং ৭নং শিবনগর ইউনিয়নে ৩ হাজার ৫৮৬ টি পরিবার রয়েছেন। এসব পরিবারের মাঝে টিসিবি’র খাদ্যপণ্য সরবরাহের জন্য তিনজন নিয়োগকৃত ডিলার রয়েছেন।

এদিকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সুবিধাভোগীদের স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। ১৮ হাজার ৮৭৯ কার্ডের মধ্যে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫৪ টি কার্ড। ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ কার্ড চূড়ান্ত না হয়ে আসায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর থেকে এখন পর্যন্ত আর টিসিপি পণ্য বিতরণ করা যায়নি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্বল্প আয়ের কার্ডধারী পরিবারগুলো।

টিসিবি’র কার্ডের সুবিধা না পাওয়া নিম্নআয়ের কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পূর্বে এসব তালিকা করেছেন পৌরসভা মেয়র ও কাউন্সিলররা এবং ইউনিয়ন পরিষদে করেছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। এজন্য কার্ডের সুবিধা পেয়েছেন ওইসব জনপ্রতিনিধির আস্থাভাজন লোকজন। লোক দেখানো কিছু নিম্নআয়ের মানুষ কার্ড পেলেও কার্ড পেয়েছে আর্থিক স্বচ্ছল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকা ব্যক্তিরাও। প্রকৃত নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে সুবিধা দিতে নতুন করে তালিকা তৈরির দাবি জানিয়েছেন এসব সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো।

  গৃহবধূ কল্পনা রানীর জানান, জনৈক জনপ্রতিনিধির কাছে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও কার্ড পাননি। অর্থচ যাদের ধনসম্পত্তি রয়েছে তাদের নামে হয়েছিল এই কার্ড। প্রকৃত নিম্নআয়ের পরিবারগুলোকে কার্ড দিয়ে টিসিবি’র সুবিধা দেওয়া হোক। 

কার্ডধারী রিকশাচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা দিন করি দিন খাই। রমজান মাসে টিসিবি’র খাদ্যপণ্য পাওয়া যাবে এমন আশা থাকলেও এখন পর্যন্ত দুইমাস থেকে পাইনি।কবে পাবো তাও ঠিক নেই। 

টিসিবি’র ডিলার মেসার্স শাহরিয়ার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল লতিফ বলেন, চূড়ান্ত হওয়া কার্ডের বিপরীতে খাদ্যপণ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু কিছু কাডের জন্য বিতরণ কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে। সব কার্ড না আসা পর্যন্ত খাদ্যপণ্য বিতরণ করতে গেলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য সব কার্ডের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

অপর ডিলার মেসার্স ভোলা প্রসাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী অনিল প্রসাদ বলেন, যে কয়টি স্মার্ট কার্ড হয়েছে তার বিপরীতে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের খাদ্যপণ্য মজুত রয়েছে। সব কার্ডের খাদ্যপণ্য বিতরণ করা না গেলে হট্টগোল হতে পারে এমন আশঙ্কায় ১ হাজার ৫৪ জন স্মার্ট কার্ডধারীর মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা যাচ্ছে না। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওযা হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কার্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আশরাফুল হক বলেন, কিছুদিন আগে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফুলবাড়ীর ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে