বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। আজ রোববার (১৬ মার্চ) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নির্মম নির্যাতনের ফলে প্রাণ হারান তিনি। এই ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে এবং বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন, ৭ অক্টোবর, আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে, মিথ্যা অভিযোগ তুলে, দলবদ্ধভাবে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেন। বিচারকাজ শেষে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় ঘোষিত হয়, যেখানে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি গ্রহণ করে হাইকোর্ট।
রোববার হাইকোর্ট ২০২১ সালের বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। আদালতের এ রায়ের পর আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ জানান, তারা রায়ে আপাতত সন্তুষ্ট। তবে দ্রুততম সময়ে এ রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জন আসামি বুয়েট ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মুনতাসির আল জেমি নামের এক আসামি গত বছর গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ জনও বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে রয়েছে সহসভাপতি, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও অন্যান্য সদস্য।
আবরার ফাহাদ হত্যার মূল কারণ হিসেবে উঠে আসে সন্দেহ ও ছাত্র রাজনীতির দৌরাত্ম্য। হত্যাকাণ্ডের পর আন্দোলনের মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয় এবং শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেন, যার মধ্যে ছিল বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার আহ্বান।
এই রায় দেশে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করেন অনেকেই। তবে আবরারের পরিবার ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা চান দ্রুততম সময়ে এই রায় কার্যকর হোক, যাতে ভবিষ্যতে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।