ভর্তি পরীক্ষা এককভাবে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:২৭ এএম
ভর্তি পরীক্ষা এককভাবে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়

এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি এবং খরচ কমাতে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা চালু করা হয়েছিল। ওই প্রক্রিয়ায় ভর্তি হতে একজন শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষা দিয়েই তার যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতো। কিন্তু আসন্ন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি সামনে রেখে কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতিমধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরো প্রতিষ্ঠান একই পথ অনুসরণ করতে চাওয়ায় উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে আবারো পুরোনো ভোগান্তি ফেরার আশঙ্কা বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের আবারো ছুটতে হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যয় ও ভোগান্তি উভয়ই বাড়বে। উচ্চশিক্ষা খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মূলত আর্থিকভাবে বিপুল লাভের কারণেই গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আলাদা পরীক্ষা নিতে আগ্রহী। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ও স্বকীয়তার দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু ভর্তির ফরম বিক্রি বাবদ বিপুল আয়ের বড় অঙ্কই শিক্ষকসহ ভর্তির কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা পেয়ে থাকে। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা আসন্ন শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যবস্থা অনুসরণ করতে উপাচার্যদের অনুরোধ করেছেন। কিন্তু ওই অনুরোধ উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর আলাদাভাবে পরীক্ষা হলে ভোগান্তি ও ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতেও ব্যাঘাত ঘটবে। এমন পরিস্থিতিতে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সূত্র জানায়, সারা দেশে বর্তমানে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ১১৪টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৮৮১টি কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। তাছাড়া ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসা এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি বড় সরকারি কলেজে উচ্চশিক্ষায় পড়ানো হয়। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতো। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথমে গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি হয় কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। তাছাড়া দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (জিএসটি) বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছভুক্ত হয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছিলো। তবে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয়। গুচ্ছে না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমাতে পেরেছে। তাছাড়া প্রায় তিন দশক ধরে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে একই ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়। ফলে মেডিকেলে পরীক্ষা নিয়ে কোনো দুর্ভোগ নেই। সূত্র আরো জানায়, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় একসময় নেতৃত্ব দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষকদের গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চাপ ছিল। এবার ওই প্রতিষ্ঠানটিই বেরিয়েই গেল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে ফরম বিক্রির কাজও শেষ করেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার প্রাথমিকভাবে মোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। প্রাথমিক আবেদন ফি নেয়া হয় শিক্ষার্থীপ্রতি ১০০ টাকা। শুধু প্রাথমিক আবেদন ফি হিসেবেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় ২ কোটি টাকা আয় করেছে। এখন চলছে চূড়ান্ত আবেদন পর্ব। চূড়ান্ত আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীপ্রতি ৭০০ টাকা ফি দিতে হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রতি ইউনিটে ৪০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। যদিও গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষ মত থাকলে পক্ষেই বেশির ভাগ। তাছাড়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও একসময় সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় নেতৃত্ব দিতো। কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ও এবার আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে ভর্তির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। তাছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আলাদাভাবে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম জানান, গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পক্ষে-বিপক্ষ মত আছে। তবে বেশির ভাগই পক্ষে। যদি কোনো সীমাবদ্ধতা থাকে, তাহলে সেটা সমাধান করা হয়। 

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে