ভারতে বাংলাদেশ সম্পর্কে যা হচ্ছে

এফএনএস অনলাইন ডেস্ক: : | প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৩৫ এএম : | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৩৪ এএম
ভারতে বাংলাদেশ সম্পর্কে যা হচ্ছে

ভারত বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক আরোও  এগিয়ে নেয়ার বিষয়টি ঢাকাকে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের ঢাকা সফরের এক দিনের মাথায় দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন অভিমুখে আরএসএস মিছিল করছে। দিল্লি থেকে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সমর্থনে সিভিল সোসাইটি অব দিল্লির ব্যানারে ভারতের দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল চলছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার পর দিল্লির চাণক্যপুরী থানার তিন মূর্তি চক থেকে মিছিলটি শুরু হয়েছে।

বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মিছিলে তিন থেকে চার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। সেখানে বিভিন্ন বয়সী পুরুষদের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নারীও যোগ দিয়েছেন।

তবে তাদেরকে শেষ পর্যন্ত দূতাবাস অবধি যেতে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট না। কারণ রাস্তায় ব্যারিকেড আছে। তাই তারা এক এখন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন।

বিক্ষোভ মিছিলে প্রায় সবার হাতেই প্ল্যাকার্ড দেখা যাচ্ছে। প্ল্যাকার্ডে- “বাংলা বাঁচাও, বাঙালি বাঁচাও, বাঁচাও সনাতন!”, “বাংলাদেশ, একাত্তর মনে করো, জুলুমবাজি বন্ধ করো! সেভ বাংলাদেশি হিন্দুজ এমন বেশ কিছু স্লোগান দেখা যাচ্ছে।

বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা বলেন, গত এক যুগে দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ভারতীয়দের এমন বিক্ষোভ করতে দেখা যায়নি। এই বিক্ষোভ বহু বছরের মধ্যে প্রথমবার। এর আগে, শুক্রবার  ( ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে আরএসএসের দিল্লি শাখার গণমাধ্যম যোগাযোগ বিভাগের সহপ্রধান রজনীশ জিন্দাল এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সেদিন তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের দিন আগামী ১০ ডিসেম্বরদিল্লির নাগরিক সমাজেরব্যানারে বাংলাদেশ দূতাবাসে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

রজনীশ জিন্দাল আরও বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচারের ঘটনায় সারা ভারত ক্ষুব্ধ উদ্বিগ্ন। ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচিতে দেশের ২০০টিরও বেশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। সময় তারা বাংলাদেশ হাইকমিশনে স্মারকলিপি পেশ করবেন। ছাড়া স্মারকলিপি দেবেন জাতিসংঘ, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছেও।

 

বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ হল ভারতের আরও হোটেল

বাংলাদেশি নাগরিকদের হোটেলের ঘর ভাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের হোটেল মালিকরা। তবে এখনও বাংলাদেশিদের জন্য হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন নি শৈল শহর দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকরা। এর আগে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদার হোটেল মালিকরা ঘোষণা করেছিলেন যে বাংলাদেশি নাগরিকদের তারা ঘর দেবেন না। যদিও পরে আগরতলার হোটেল মালিকরা সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন।

শিলিগুড়ি শহর আশপাশের অঞ্চলের হোটেল মালিকদের সংগঠন গ্রেটার শিলিগুড়ি হোটেলিয়ার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিব উজ্জ্বল ঘোষ বিবিসিকে বলেছেন, “ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক যে সংঘাতের আবহাওয়া চলছে, বিশেষত সেদেশে ভারতের জাতীয় পতাকাকে অবমাননা এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের একাংশের উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বাংলাদেশের নাগরিকদের আমাদের কোনও হোটেলে থাকতে দেওয়া হবে না।

শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এলাকার ১৮০টি হোটেল মালিকদের সংগঠন এটি। মি. ঘোষ আরও বলছিলেন, “শিলিগুড়ি ছাড়াও আমরা কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের হোটেল মালিকদের সংগঠনের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারাও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে এই ব্যাপারে। আর দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকদের সংগঠনও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে দার্জিলিংয়ের হোটেল মালিকরা এখনই এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না বলেই আমাদের জানিয়েছেন।

পর্যটন মরসুমে দার্জিলিংয়ে প্রায় তিরিশ হাজার মতো বাংলাদেশি পর্যটক আসেন বলে পর্যটন শিল্পের সূত্রগুলি জানিয়েছে। শিলিগুড়ি বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশি পর্যটকরা বেশি সংখ্যায় আসছিলেন।

এদের একটা বড় অংশ শৈল শহরগুলিতে যাওয়ার আগে শিলিগুড়ির হোটেলে ঘর নেন এক বা দুদিনের জন্য। আবার শিলিগুড়ি বৃহৎ ব্যবসায়িক কেন্দ্রও, তাই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও শিলিগুড়িতে কাজে আসেন। তবে শিলিগুড়ি এলাকার হোটেল মালিকরা বাংলাদেশিদের ঘর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তার প্রভাব খুব বেশি পড়ার কথা নয়, কারণ এমনিতেই এখন ভারতীয় ভিসা দেওয়ার কড়াকড়ি থাকায় ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিরা ভারতে প্রায় আসছেনই না।

 

 কলকাতা থেকে গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধেধর্ষণের অভিযোগ নেই

ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য মেঘালয়ের পুলিশ বলছে যে তাদের রাজ্যের একটি ফৌজদারি মামলায় পালিয়ে থাকা চারজন বাংলাদেশিকে কলকাতা থেকে তারা গ্রেফতার করে নিয়ে এসেছে। এরা সবাই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এর অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে এদের বিরুদ্ধে মেঘালয়ে ধর্ষণের অভিযোগ আছে বলে যে খবর রটেছে, তা সঠিক নয় বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক ইদাশিশা নংরাং। মেঘালয়ের স্থানীয় সূত্রগুলি জানিয়েছে ডাউকি সীমান্তে ট্রাক চালকদের সঙ্গে অক্টোবর মাসে হাতাহাতির ঘটনায় অভিযুক্ত হন ধৃত চারজন।

 তারা হলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান (মুক্তি), সহসভাপতি আবদুল লতিফ (রিপন) সদস্য ইলিয়াস হোসেন (জুয়েল)। কলকাতা লাগোয়া বিধাননগর পুলিশের সহায়তায় মেঘালয় পুলিশ ওই চারজনকে রবিবার গ্রেফতার করে। বিধাননগর পুলিশের সূত্রগুলি জানিয়েছে, পাঁচই অগাস্টের পরে তারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতের মেঘালয়ে বসবাস করছিলেন বলে মেঘালয় পুলিশের কাছ থেকে তারা জানতে পেরেছে।

 ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ডাউকি থানার একটি মামলায় অভিযুক্ত ওই চারজন কলকাতা লাগোয়া নিউটাউন এলাকার একটি আবাসনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রবিবার সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করে শিলংয়ে আনা হয়েছে বলে মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে। মেঘালয় পুলিশের মহাপরিচালক মিজ নংরাং বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, "ওই চারজনের বিরুদ্ধে ডাউকি থানার একটা মামলা ছিল। কোনও ধর্ষণের অভিযোগ নেই এদের বিরুদ্ধে। ডাউকি থানায় এদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার চারটি ধারা এবং বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারায় অভিযোগ ছিল। সেই মামলাতেই কলকাতা থেকে এদের গ্রেফতার করে আনা হয়েছে।"

যেসব ধারায় ধৃত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা আছে সেগুলি মূলত অস্ত্র দিয়ে হামলা (আগ্নেয়াস্ত্র নয়), হামলার জন্য জমায়েত হওয়া, এক লক্ষ টাকার কম পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধনের মতো অভিযোগ। এছাড়া অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের মামলাও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।


বাংলাদেশের ৭৯ জেলে-নাবিকসহ বাংলাদেশি দুটি মাছ ধরার জাহাজ ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ৭৯ জেলে-নাবিকসহ বাংলাদেশি দুটি মাছ ধরার জাহাজ ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। জাহাজ দুটি হলো এফভি মেঘনা- এফভি লায়লা-২। খুলনা অঞ্চলে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় সোমবার ( ডিসেম্বর) দুপুরে ঘটনা ঘটে বলে সামুদ্রিক মৎস্য দফ্তরে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে জাহাজ দুটির মালিকপক্ষ।

বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশন অফিস সেক্রেটারি আবিদ হাসান বলেন, এফভি লায়লা- ফিশিং জাহাজটির মালিক সিদ্দিকুর রহমান। তাদের অপারেশন কোম্পানির নামএস আর ফিশিং এফভি মেঘনা- ফিশিং জাহাজের মালিক এমএ ওয়াহেদ, অপারেশন কোম্পানির নাম সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড।

সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (অপারেশন) আনসারুল হক মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাহাজের নাবিকরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা সবশেষ খবর পেয়েছি, জাহাজ দুটিকে ভারতের উড়িষ্যার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়ে যোগাযোগ করেছি। বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হলে সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

 জানা গেছে, এফভি মেঘনা- নাবিকসহ ৩৭ জন এফভি লায়লা- ৪২ জনসহ জেলে ছিলেন। তবে কী কারণে ট্রলারগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি।

তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সরকারি কোনও কর্তৃপক্ষ থেকে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারেনি। নির্দিষ্ট কোন অবস্থান থেকে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কারা কেন ধরে নিয়ে গেছে; সেসব বিষয়েরও উত্তর পাওয়া যায়নি।

নৌ-পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডোর মাকসুদ আলম জানান, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। খতিয়ে দেখে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

সামুদ্রিক মৎস্য দফতরের পরিচালক মো. আবদুস ছাত্তার বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে এখনও অবগত নই। অফিসে খবর নিয়ে জানাতে পারবো।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, তিনি মিডিয়ার মাধ্যমে ঘটনা শুনেছেন। কিন্তু কোনও চিঠি বা অভিযোগ পাননি। ফলে ঘটনাটি কোন লোকেশনে ঘটছে তাও জানতে পারছেন না।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW