বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে দেওয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এই সমালোচনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ধানের শীষ ঐক্যমঞ্চ (ঘাটাইল) আয়োজিত এক দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। এ মাহফিলটি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করা হয়।
শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “যাঁরা গণতন্ত্র ও বাস্তবতাকে মেনে চলেন, তাঁদের বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে স্বাগত জানানো উচিত ছিল। কিন্তু তাঁর সদিচ্ছা ও উদ্যোগ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে জাতি গণতন্ত্রে ফিরবে, এটাই বাস্তবসম্মত চিন্তা। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী নির্বাচনবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ‘জিয়াবাদ ও মুজিববাদ আর চাই না’ মন্তব্যের সমালোচনা করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “মুজিব আর জিয়া এক জিনিস নয়। মুজিব গণতন্ত্র হত্যা করেছেন, আর জিয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। মুজিব মুক্তিযুদ্ধের সময় আত্মগোপনে ছিলেন, আর জিয়া মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। মুজিব দুর্ভিক্ষ এনেছেন, জিয়া তা দূর করেছেন। যে কেউ যদি এই পার্থক্য না বোঝে, তবে সে রাজনীতির যোগ্য নন।”
তিনি আরও বলেন, “বিরোধী মতকে দমনের জন্য শেখ মুজিব রক্ষীবাহিনী গঠন করেছিলেন এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে সংসদে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব দম্ভ করে বলেছিলেন, ‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’”
শামসুজ্জামান দুদু অভিযোগ করে বলেন, “আরাফাত রহমান কোকো কেবল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সন্তানই ছিলেন না, তিনি একজন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। চিকিৎসা না দিয়ে, অবহেলা ও নির্যাতনের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। আমাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, কিন্তু ইতিহাস একদিন সত্য উদঘাটন করবে।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “আগামী দিনের রাজনীতি হবে শহীদ জিয়ার আদর্শে পরিচালিত জাতীয়তাবাদীদের। মানুষ তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। ১৭ বছর ধরে তিনি বিএনপিকে শুধু রক্ষা করেননি, বরং গণতন্ত্রকামী মানুষদের সংগঠিত করেছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম টুটুলের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক, লোটন খন্দকার, হাতেম আলীসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।