যাদের মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হয়

এফএনএস ধর্ম: : | প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম : | আপডেট: ২৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম
যাদের মৃত্যুর সময় কালেমা নসিব হয়

মৃত্যুর সময় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসুল) এই সাক্ষ্য-বাক্য পাঠ করার বিশেষ গুরুত্ব আছে। পাপের মার্জনা ও ক্ষমা লাভে এর ভূমিকা অপরিসীম। কেননা মৃত্যুর সময় এই কালেমা তারই ভাগ্যে জোটে যে তাতে বিশ্বাস করে এবং তার মর্ম অনুধাবন করে। প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি এই পবিত্র বাক্য পাঠ করে এবং তার মর্ম অনুধাবন করে তার প্রবৃত্তিগুলো মরে যায়, সংশয়পূর্ণ অন্তর নম্র হয়, অবাধ্যতার পর তা অনুগত হয়, প্রত্যাখ্যান করার পর স্বীকার করে, উদ্ধতার পর বিনয়ী হয়, দুনিয়া ও এর অনর্থক বিষয়ের মোহ অন্তর থেকে দূর হয়। কালেমায় বিশ্বাসীরা মহাবিশ্বের স্রষ্টা, মুনিব ও প্রতিপালকের সামনে সিজদাবনত হয়, তাকে সাক্ষী রেখে সত্যকে জীবনে ধারণ করে। বিনিময়ে তারা আল্লাহর দয়া, ক্ষমা ও অনুগ্রহ কামনা করে। সে শিরক ও বাতিলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে। তার অন্তরে যে দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও সংশয়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংঘাত চলত তা দূর হয়ে যায়। সে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়। এর মাধ্যমে বান্দা পুরোপুরি আল্লাহমুখী হয়। তার চিন্তা, অন্তর ও আত্মাও আল্লাহমুখী হয়ে যায়। ফলে তার ভেতর ও বাহির উভয়ই আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করে নেয়। তার ভেতর ও বাহিরের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। বান্দা যখন নিষ্ঠার সঙ্গে কালেমা পাঠ করে তখন অন্তরের নিষ্ঠার কারণে গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া বাকি সব) সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে সে গাইরুল্লাহর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করে না। দুনিয়া তার অন্তর থেকে পুরোপুরি অন্তর থেকে বের হয়ে যায়, বরং বান্দার তার পার্থিব জীবনকে আল্লাহর পায়ে সমর্পণ করে। প্রবৃত্তিকে পুরোপুরি অবদমিত করে এবং অন্তর পূর্ণ করে পরকালের ভাবনায়। ফলে পরকালই হয় তার লক্ষ্য এবং দুনিয়াকে পেছনে ফেলে আখিরাত পানেই সে এগিয়ে যায়। তার পুরো জীবনের নির্যাস হয়ে কালেমা উচ্চারিত হয় তার মুখে। এই পবিত্র কালেমা তাকে পাপমুক্ত করে এবং তার প্রভুর সম্মুখে আনন্দময় অবস্থায় উপস্থিত করে। এটা সে লাভ করে, কেননা সে সত্য সাক্ষ্য নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হয়েছে। তার ভেতরটা বাহিরের, প্রকাশ্যটা অপ্রকাশ্যের অনুকূল। যদি সুস্থতার দিনগুলোতে এমন নিষ্ঠাপূর্ণ সাক্ষ্য মানুষের জীবনে পাওয়া যায়, সে দুনিয়া ও ঘরসংসারের মোহ ত্যাগ করে, মানুষকে ছেড়ে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয় এবং তাকেই সব কিছুই বিপরীতে ভালোবাসে, তবেই মৃত্যুর সময় ব্যক্তির কালেমা নসিব হয়। কিন্তু বহু মানুষ এই কালেমা কেবল মুখেই উচ্চারণ করে। অথচ তাদের অন্তর কুপ্রবৃত্তি, পৃথিবী ও তার উপকরণের ভালোবাসায় পূর্ণ; তার মন ভরপুর থাকে গাইরুল্লাহ ও তা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। তার দায়িত্ব হলো দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা যেভাবে মৃত্যুর সময় সে সব ছেড়ে যায়। তবেই সে পশুর জীবন থেকে মুক্তি পাবে। মুক্তির পথে চলতে পারবে।

ছবি: ০৩



ছবি: ০৪

শীতকালীন ইবাদতের গুরুত্ব 

এফএনএস ধর্ম: মুসনাদে আহমদে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল।’ বায়হাকিসহ অনেকের বর্ণনায় এভাবে এসেছে, ‘শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল; কারণ শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’ অর্থাৎ সহজে অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদতের সুযোগ লাভের কারণে শীতকাল মুমিনের জন্য বসন্তকাল হয়ে ওঠে। আমের ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেন, নবিজি (সা.) বলেছেন, শীতল গনিমত হচ্ছে শীতকালে রোজা রাখা। (সুনানে তিরমিজি) এ ছাড়া ওমরসহ (রা.) অনেক সাহাবীদের থেকেও এ রকম বক্তব্য বর্ণিত রয়েছে। ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে তিনি বলেছেন, ‘শীত ইবাদতকারীদের গনিমতস্বরূপ।’ (হিলয়াতুল আউলিয়া) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, শীত এলে তিনি বলতেন, ‘স্বাগতম শীতকাল! শীতকালে বরকত অবতীর্ণ হয়। নামাজের জন্য শীতের রাতগুলো দীর্ঘ হয়, রোজার জন্য দিনগুলো সংক্ষীপ্ত হয়।’ এ বক্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট যে, শীতকালকে আমাদের অনুসরণীয় সাহাবিরা সহজে ইবাদতের বিরাট সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতেন। রাতের একটি অংশে জেগে নামাজ পড়তেন, দিনে রোজা রাখতেন। আমরাদেরও উচিত শীতকালে বেশি বেশি ইবাদত করা, নামাজ পড়া, রোজা রাখা, যেন নবিজি (সা.) ও তার সম্মানিত সাহাবিদের মতো শীতকাল আমাদের জীবনেও ইবাদতের বসন্তকাল হয়ে উঠতে পারে। নামাজ-রোজার পাশাপাশি শীতকালে শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র দান করেও আমরা বিপুল সওয়াব লাভ করতে পারি। রাসুল (সা.) বলেছেন, কোন মুসলিম তার কোন বিবস্ত্র মুসলিম ভাইকে কাপড় পরিধান করালে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরিধান করবেন। কোন মুসলিম তার ক্ষুধার্ত মুসলিম ভাইকে খাবার খাওয়ালে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। কোন মুসলিম তার কোন তৃষ্ণার্ত মুসলিম ভাইকে পানি পান করালে আল্লাহ তা’আলা তাকে মোহরাঙ্কিত স্বর্গীয় সুধা পান করাবেন। (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি)

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW