রোলস রয়েস কেন বিখ্যাত গাড়ি, বাংলাদেশে আছে কয়টি

এফএনএস : | প্রকাশ: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:০৮ এএম : | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:৫৮ এএম
storage/2024/december/07/news/891675456c97d825.jpg

বিশ্বের বিলাসবহুল গাড়িগুলোর মধ্যে রোলস রয়েস অন্যতম। ইংল্যান্ডের গাড়ি নির্মার্তা প্রতিষ্ঠান রোলস রয়েস পৃথিবীর গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। পৃথিবীর ধনী ব্যক্তিরাও একসময় ইচ্ছে করলেই এই বিলাসবহুল গাড়িটি কিনতে পারতেন না, দ্বিগুণ টাকা থাকলেও। কারণ গাড়ি কিনতে হলে রোলস রয়েসের কিছু শর্ত থাকত, যা অনেক ধনী ব্যক্তিরাও পূরণ করতে ব্যর্থ হতেন। কিন্তু বর্তমানে শর্তগুলো থেকে বেরিয়েছে এসেছে রোলস রয়েস। এখন যে কেউ চাইলেই রোলস রয়েসের গাড়ি কিনতে পারবেন। নান্দনিক ডিজাইন, ক্রেতাদের পছন্দমত রং ও শ্বৈল্পিক হাতে নিখুত ভাবে তৈরি করার জন্য ক্রেতার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি গাড়ি রোলস রয়েস। এ কারণেই রোলস রয়েসের গাড়ির দাম আকাশচুম্বী। তবে বিষ্ময়ক ব্যাপার হলো বাংলাদেশে গত ছয় মাসে ৮টি রোলস রয়েস গাড়ি আমদানী করা হয়েছে। পূর্বের আমদানিকৃত ৪টি গাড়ি মিলে বাংলাদেশে রোল রয়েসের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ডাবল জিটিটে, ১২টি। আপনি কোন একসময় রাজধানীর অভিজাত এলাকা দিয়ে চলাচলের সময় হয়ত চোখে পড়ছে দেশের সবচেয়ে দামি গাড়ি রোলস রয়েস।


পছন্দমতো রং

রোলস রয়েস গাড়ির দামের অন্যতম একটি নির্ধারক হলো এর রঙের ব্যবহার। রোলস রয়েস গাড়ির কোনো নির্দিষ্ট রং নেই। গাড়ি কেনার প্রথম ধাপেই তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে নেবে আপনার পছন্দের কোনো রং আছে কি না? এমনকি আপনার যদি কোনো একটি রোলস রয়েস গাড়ির রং পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে ওই গাড়ির মালিকের অনুমতি পেলে তারা আপনার গাড়ির রং সেভাবে করে দেবে। অর্থাৎ গাড়ির রঙের ক্ষেত্রে মালিকের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয় রোলস রয়েস। লিপস্টিকের রং থেকে শুরু করে আপনার পোষা প্রাণীর পশমের রঙের গাড়িও চাইলে তারা দিতে পারে। 

এমনকি কেউ যদি সমুদ্র সৈকতে ছুটি কাটাতে গিয়ে কোনো সাগরের ঢেউয়ের নির্দিষ্ট কোন নীল শেড পছন্দ করেন তাহলে রোলস রয়েস তাদের কালার স্পেশালিষ্টকে সেই লোকেশনে পাঠিয়ে সেই রঙটি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে চেষ্টা করে। দীর্ঘসময় রঙ নিয়ে গবেষণা করার পরে তারা তাদের গ্রাহককে কয়েকটি স্যাম্পল দেখান, সেখান থেকে গ্রাহক তাদের পছন্দসই একটি রঙ বেছে নেন।

যদি গাড়িতে সেই রঙ দেবার পরে গ্রাহকের পছন্দ না হয় তাহলে পুনরায় তারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেন। এভাবেই গ্রাহকের পছন্দের রঙের ওপরে রোলস রয়েস গাড়ির দাম অনেকটা নির্ধারণ করেন। রোলস রয়েস গাড়ির জন্য ৪৪ হাজারের বেশি রঙের অপশন রয়েছে। প্রতিটি রঙই আলাদা। একটি রঙ না পাওয়া গেলে তারা সেই রঙ নিজেদের দক্ষকর্মী দিয়ে তৈরি করে নেয়। রঙ যতটা জটিল হবে দামও তত বেশি হবে।


রঙের প্রক্রিয়া

রোলস রয়েস গাড়ির রং করাটাকে পেইন্ট জব বলা হয় না। তারা সেটিকে সার্ফেস ফিনিশ বলতেই বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী যেই রং তৈরি করেন এবং ওই রংটির নাম রাখা হয় গ্রাহকের নাম অনুযায়ী। পরবর্তীতে কেউ এই রঙের গাড়ি চাইলে যার নামে রংটি তৈরি তার অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না পেলে ওই রংটি গাড়িতে ব্যবহার করা যাবে না।


রোলস রয়েস গাড়িতে কমপক্ষে ৭ প্রলেপ রঙ দেওয়া হয়। তবে এমনো গাড়ি রয়েছে যেখানে ২৩ প্রলেপ পর্যন্ত রঙ দেওয়া হয়েছে। যত বেশি রঙের প্রলেপ দেওয়া হবে গাড়ির দাম হবে ততই বেশি। কেন না প্রতিবার একটি নতুন লেয়ার দেবার পূর্বে গাড়িতে প্রাইমার লাগানো হয়। প্রাইমার লাগিয়ে প্রতিবার রংও লাগে অনেক বেশি।

প্রথমে প্রাইমারের পর লাগানো হয় বেজ কোট। বেজ কোট স্প্রে করে লাগানো হয় গাড়িতে। রঙের শেডের ওপরে নির্ভর করে কয়েকবার পর্যন্ত বেজ কোট লাগানো হয়। অনেক সময় নিয়ে কাজটা করতে হয়। বেজ কোট লাগানো শেষ হয়ে গেলে পরে দেয়া হয় মূল রঙ। মূল রঙও কয়েকটি লেয়ারে গাড়িতে স্প্রে করা হয়। এই রঙের সুরক্ষার জন্য পরে দেওয়া হয় লিকুয়ার। যত বেশি মসৃণ রঙ দামও ঠিক ততই বেশি।


ধাতব মিশ্রিত রং

অনেক গ্রাহক তাদের গাড়িতে রংয়ের সঙ্গে আরও কিছু যোগ করতে চান। তাই রঙের সঙ্গে তারা যুক্ত করেন নানা রকমের ধাতব পদার্থ। গ্রাহক নিজের পছন্দ অনুযায়ী হীরা, স্বর্ণ কিংবা অন্য পদার্থ রঙের মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত হীরা কিংবা স্বর্ণের জন্যেও গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ।

যদি রঙের সঙ্গে হীরা সংযুক্ত করা হয় তাহলে প্রথমে একটি আলাদা কোম্পানির সাহায্যে সেই হীরাগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী গুঁড়া করে রঙের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়। সেক্ষেত্রে রঙের সঙ্গেই ডায়মন্ডের উজ্জ্বলতা ও চাকচিক্য যুক্ত হয়।

আর স্বর্ণের ক্ষেত্রে অনেকেই পুরো গাড়িই গোল্ড প্লেটিং করেন। এভাবেই রোলস রয়েস গাড়ি অনেক বেশি দামের হতে পারে। কেন না চাইলেই গ্রাহক সেখানে ইচ্ছেমতো দামি ম্যাটেরিয়াল পেইন্টের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। এই ম্যাটেরিয়াল যারা রঙের সঙ্গে যুক্ত করেন তারা কোনো সাধারণ কারিগর নন। বিশেষজ্ঞ এসব কারিগরদের চার্জও অনেক। যেটা যুক্ত হয় গাড়ির দামের সঙ্গে। এভাবেই ইনফিউজড রঙের মাধ্যমে অন্যতম দামি গাড়ি হয়ে উঠে রোলস রয়েস।


হাতে তৈরি রোলস রয়েসের নিখুঁত ইন্টেরিয়র

রোলস রয়েস তাদের গাড়ির ভেতরের কোচ ও অন্যান্য ডিজাইনের জন্য আলাদা কর্মী নিযুক্ত করে থাকে। পুরো কোম্পানিতে কোচ স্ট্রাইপের জন্য কেবল একজন দক্ষ কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। তার কাজ কেবল গাড়ির ভেতরের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সংযুক্ত করা। এই কাজ করতে কারিগরটি প্রয়োজনে গ্রাহকের পছন্দের ইন্টেরিয়র ঘুরে দেখেন। এই খুঁটিনাটি কাজ করতে যতটা বেশি সময় ব্যয় হবে গাড়ির দাম হবে ঠিক ততই বেশি।

পেইন্টার তাদের কাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করে থাকেন। সেই ব্রাশগুলোর অধিকাংশই হাতে তৈরি। সিনথেটিক ব্রাশ দিয়ে রঙ করলে সেটির দাগ থেকে যায়। কিন্তু হাতে তৈরি এই ব্রাশের সাহায্যে রঙ করলে এরকম কোনো ব্রাশের দাগ থাকে না। ফলে একটি মসৃণ রঙ তৈরি হয় যা দেখলে মনে হয় যে এখানে কোনো রঙ করাই হয়নি। যত বেশি মসৃণ ও যত বেশি নিখুঁত কাজ তার বাড়বে গাড়ি তৈরির খরচ।


স্বয়ংক্রিয় হুইল

রোলস রয়েস গাড়ির হুইলের মধ্যে তাদের লোগোটি সব সময় উপরের দিকে থাকা চাই। যদি কখনো গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন গাড়িতে হুইলের মধ্যে থাকা রোলস রয়েসের লোগোটি একদম সোজা উপরের দিকেই আছে। অর্থাৎ গাড়ির হুইল ছাড়ার পরে তা নিজে নিজে ঘুরে গিয়ে সেই লোগোটিকে সোজা রাখবে। সেই জন্য রোলস রয়েস ব্যবহার করে তাদের হাতে তৈরি করা এই স্বয়ক্রিয় হুইল।

তারা কখনই চায় না যে তাদের গাড়ির লোগোটি উলটে থাক কিংবা সাইড হয়ে থাক। যেকোনোভাবে গাড়িটিকে পার্ক করা হোক না কেন হুইলটি পুনরায় সোজা হয়েই থাকবে।

এই ছোট ফিচারটি গাড়ির চালানোর ক্ষেত্রে যেমন সুবিধা দেয়, তেমনি গাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে অনেকগুণ। সেই সঙ্গে এই ফিচার নির্দেশ করে, রোলস রয়েস তাদের ব্র‍্যান্ডকে ঠিক কতটা গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করে। হুইলের দাম অনেক বেশি, সেই সঙ্গে সেখানে ব্যবহার করা হয় আরও মূল্যবান ম্যাটেরিয়াল। তারা এই হুইলের জন্য ব্যয় করেন অতিরিক্ত সময়। নিজেরা হুইলটি প্রথমে বানিয়ে সেটা ইনস্টল করেন গাড়ির ভেতর। ইনস্টল করার পরও হুইলটি আরও কয়েকবার বিভিন্নভাবে চেক করা হয়। এই সব ব্যয় একত্রে যুক্ত করা হয় রোলস রয়েসের মূল দামের সঙ্গে।


শব্দহীন অনুভূতি

রোলস রয়েস গাড়ির ভেতরটা একেবারে সাউন্ডপ্রুফ। সে জন্য তারা ৩০০ পাউন্ডের ইনসোলেশন ব্যবহার করে গাড়িটিকে শব্দমুক্ত রাখে। গাড়িতে ভ্রমণের সময় পাওয়া যায় শব্দহীন যাত্রার এক অসাধারণ অনুভূতি। এমনকি ফোনে কথা বলেও কেউ টের পাবেন না যে চালক আসলে কোথায় আছেন। এটি অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা দেয় যারা গাড়ি চালান তাদের। সাইলেন্ট মুডের জন্যও গাড়ির দামের ওপরে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কেন না এই ইনসোলেশন গাড়িতে ইনস্টল করা সহজ বিষয় না। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ সব যন্ত্রপাতি ও চেম্বার।


 বিশেষ টায়ার

শব্দহীন গাড়ির ক্ষেত্রে ইনসোলেশনের সঙ্গে কাজ করে রোলস রয়েস গাড়ির বিশেষ টায়ার। সাধারণত টায়ারের মধ্যে বায়ু প্রবেশ করানো হয়। তবে এই গাড়ির টায়ারে থাকে এক প্রকারের ফোম। যার ফলে এই গাড়ি চলার সময় কোনো অতিরিক্ত শব্দ তৈরি হয় না। রাস্তার শব্দ প্রায় ৯ ডেসিমেল পর্যন্ত কমিয়ে আনে এই টায়ার। ফোমের তৈরি টায়ার হওয়ায় এটি অনেক বেশি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।

এই বিশেষ চাকা বানানো হয় কেবল রোলস রোয়েস গাড়ির জন্য। সেক্ষেত্রে গাড়ির দামের ক্ষেত্রে এই গাড়ির চাকাও অনেকটা প্রভাব ফেলে। কেন না যেহেতু এই চাকাটি বিশেষভাবে কেবল রোলস রয়েসের জন্য বানানো হয় তাই এই চাকা পরিবর্তন করাও ব্যয়বহুল। সেই সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রয়োজন হবে চাকা পরিবর্তন করার জন্য। আর ফোমের তৈরি চাকা হবার কারণে পরবর্তিতেও নানান ঝামেলা তৈরি হতে পারে। সব কিছুইর ব্যয় এক সঙ্গে যুক্ত হবে রোলস রয়েসের দামের সঙ্গে।


নিজের পছন্দের ড্যাশবোর্ড

গাড়ির সামনের ড্যাশবোর্ড যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই নিজের মতো সাজিয়ে নেবার সুযোগ রয়েছে রোলস রয়েস গাড়িতে। এটিও নির্ধারণ করবে গাড়ির দাম আসলে কত হতে পারে। গ্রাহক যেকোনো ম্যাটেরিয়াল কিংবা শেপের ডিজাইন করতে চাইলে রোলস রয়েস তাদের কখনোই বারণ করবে না। যদি এমন কোনো ডিজাইন পছন্দ করে গ্রাহক যা আগে কখনো রোলস রয়েস তৈরি করেনি তবুও তারা সেটি তৈরি করবে। গাড়ির দামও তারা সেভাবেই বিবেচনা করবে, কেন না বিশেষ ডিজাইনের জন্য থাকবে তাদের বিশেষ চার্জ। গ্রাহকের কাছে যদি অর্থ থাকে তাহলে গ্রাহকের স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তর করার কাজ রোলাস রয়েসের।


গাড়ির সিলিংয়ে তারকাসাজ

রাতের আকাশে যেমন তারা মিটিমিটি করে জ্বলে থাকে, সেরকমের একটি আবহ থাকে রোলস রয়েস গাড়ির সিলিংয়ের উপরেও। সেখানে গাড়ির সিলিংয়ের মধ্যে ছোট ছোট অনেকগুলো ছিদ্র থাকে, সেগুলোর পেছনে যুক্ত করা থাকে লাইট। ফলে গাড়ির উপরের অংশে তাকালে মনে হবে আপনি রাতের আকাশের দিকেই যেন তাকিয়ে আছেন। বেশিরভাগ রোলস রয়েসের মালিক এই হেডলাইনের ডিজাইন পছন্দ করে থাকেন। এটিকে একটি সার্বজনীন ফিচারও বলা চলে। তবে যদি আপনি এটি পছন্দ না করলে সেটি তারা সরিয়ে নেবে। প্রতিটি হেডলাইনার বানাতে ১৬ ঘণ্টার অধিক সময় লাগে এবং সবগুলোই হাতে তৈরি। সেক্ষেত্রে কেন রোলস রয়েস গাড়ি এত দাম সেটি ভাবতেই পারেন। গ্রাহক চাইলে নিজের পছনের কোনো ডিজাইন করতে পারেন লাইটগুলো দিয়ে। রোলস রয়েস গ্রাহকের চাহিদা প্রাধান্য দেন সবার আগে। তবে বেশি সূক্ষ্ম কাজের জন্য চাই বেশি অর্থ।


নান্দনিক ব্র্যান্ড

বিলাসবহুল গাড়ির কথা ভাবলেই রোলস রয়েস গাড়ির নাম চলে আসবে সবার শীর্ষে। এই ব্র্যান্ডের সঙ্গেই একটি মূল্য সব সময় যুক্ত হয়ে যায়। লাক্সারি গাড়ি চাইলে দাম যে বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক রোলস রয়েসের ক্ষেত্রে। যত দিনই লাগুক আবার যত রকমের আবদার থাকুক না কেন আপনার রোলস রয়েস সেগুলো সব পূরণ করবে। তবে দিনশেষে সেই অনুযায়ী আপনার গাড়ির দামও গুনতে হবে।


রোলস রয়েস গাড়ির চেয়ে বেশি ফিচার কিংবা স্পিড সমৃদ্ধ গাড়ি অনেক দেশেই রয়েছে। তবে রোলস রয়েস গাড়ি মূলত আভিজ্যাত্যের প্রতীক আর সেই হিসেবে এই গাড়ির মূল্যমান অনেক বেশি। যেভাবে এই গাড়ি তৈরি করা হয় তাতে মূল্য নিয়ে কারও আপত্তি থাকে না।


বাংলাদেশে রোলস রয়েস

দেশে গত দুই দশকে বাণিজ্যিকভাবে আমদানি হওয়া সবচেয়ে দামি গাড়ির তালিকায় এখন এ আটটি রোলস রয়েস। এসব গাড়ির সব কটিই রোলস রয়েসের বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘স্পেক্টার’। একেকটি গাড়ির কেনা দামই পড়েছে চার থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা। এর আগে আমদানি হওয়া সবচেয়ে দামি গাড়ি ছিল ‘ফেরারি’। ইংল্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোলস রয়েস গত বছর প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারজাত শুরু করে। বাজারজাত শুরুর পর বাংলাদেশ থেকে আটটি গাড়ি কেনার জন্য বুকিং দেওয়া হয়। গত এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে এই আটটি গাড়ি দেশে পৌঁছেছে, যেগুলোর নির্মাণ সাল ২০২৪। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এসেছে চারটি। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসেছে আরও চারটি।


কারা এনেছে রোলস রয়েস

 জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের হিসাবে আটটির মধ্যে তিনটি রোলস রয়েস এনেছে যথাক্রমে ফারইস্ট স্পিনিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং লিমিটেড ও ইসলাম নিট ডিজাইনস লিমিটেড। বাকি পাঁচটি আমদানি করেছে কন্টিনেন্টাল মোটরস, এ এম করপোরেশন, প্রিয়াঙ্কা ট্রেডিং লিমিটেড, এশিয়ান ইমপোর্টস লিমিটেড ও ফোর হুইলস মোটরস।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবহারের জন্যই অভিজাত এই গাড়ি আমদানি করেছে। তবে গাড়ির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রেতার কাছ থেকে বুকিং নিয়ে আমদানি করেছে। গাড়ি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে দুজন ক্রেতার নাম জানা গেছে। তার একটি বেক্সিমকো পরিবার, আরেকটি শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক ডিবিএল গ্রুপ। একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর বেক্সিমকো পরিবারের কেনা গাড়িটি আগুনে পুড়ে যায়।

 রোলস রয়েসের বৈদ্যুতিক মডেলের সর্বশেষ গাড়িটি গত ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করেছে ঢাকার ভাটারা এলাকার ফোর হুইলস মোটরস। এই বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানিমূল্য ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড। চট্টগ্রাম কাস্টমস গাড়িটির আমদানি মূল্য ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ধরে শুল্কায়ন করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি হওয়ায় শুল্ক–করের হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তাতে শুল্ক–কর দিতে হয়েছে ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটি আমদানিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি না হলে এই গাড়ির (চার হাজার সিসির বেশি ধরে) শুল্ক–কর দিতে হতো ৮২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ বা ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

রোলস রয়েসের তেলচালিত গাড়িগুলো ইঞ্জিনক্ষমতা সাধারণত ছয় হাজার সিসির বেশি হয়। এসব গাড়ি আমদানিতে আমদানি মূল্যের চেয়ে সোয়া আট গুণ বেশি শুল্ক–কর দিতে হয়। বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক–কর কম, তাই ক্রেতারা কেনার সাহস করেছেন। এসব দামি গাড়ির ঋণপত্র খোলা হয় দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগে। এখন এসব দামি গাড়ির ক্রেতা কম।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW