গত ৫০ দিনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৮৮টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং ৩০টি সড়ক অবরোধ নিরসন করেছে। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারসহ প্রধান শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ ও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারখানাগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়েছে। বর্তমানে ২ হাজার ৯৭টি পোশাক কারখানার মধ্যে বেশিরভাগ কারখানা চালু রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদাবাজি, চুরি ও হত্যার মতো অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, অপরাধের ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করে সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। দুই মাস আগে যেখানে চাঁদাবাজির সংখ্যা ছিল ২৫০টি, তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২০টিতে। চুরির ঘটনা ৮৫০ থেকে ৬০০-তে নেমেছে এবং হত্যার সংখ্যা ৩৫০ থেকে ১২০-তে নেমে এসেছে। সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল ও নজরদারির ফলে এসব অপরাধ কমে এসেছে।
বান্দরবানের লামায় অপহরণের ঘটনায় সেনাবাহিনী পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। সেনাসদর জানিয়েছে, কুকি-চিন গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি কুকি-চিনের দুটি ক্যাম্প ধ্বংস এবং তাদের নির্যাতনে গৃহহীন হওয়া ১১টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন মানবিক সহায়তা কার্যক্রমেও অবদান রেখে চলেছে। ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনকালে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তুরাগ নদীর ওপর ৫টি ব্রিজ স্থাপন, বোম ডিসপোজাল দল মোতায়েন এবং জরুরি সেবা পরিচালনা করা হয়েছে।
গত এক মাসে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযানে ৩৩৪ মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত মোট ২ হাজার ১৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য ৩ হাজার ৮৫৯ জনকে সিএমএইচ-এ চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী প্রধানের দিকনির্দেশনায় ৬২টি জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সেনাবাহিনী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।