দীর্ঘ আট মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ২৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ২৪ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডাররা (সিএইচসিপি)। দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন তারা। পরিবার পরিজন নিয়ে াতি কষ্টে দিনাতিপাত করছে হচ্ছে। কবে নাগাদ বেতন পেতে পারেন, তাও তারা জানেন না।
সরেজমিনে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর, সেনোড়া, বেতদীঘি ইউনিয়নের সৈয়দপুর, শিবনগর ইউনিয়নের পাঠকপাড়া ও কাজিহাল ইউনিয়নের পুখুরী ও এলুয়ারি ইউনিয়নের শোলাকুঁড়ি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রামের দরিদ্র সব বয়সী নারী ও পুরুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জটিল রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ প্রদান করছেন স্ব স্ব কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডাররা (সিএইচসিপি)।
সেনোড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা সেনোড়া গ্রামের রতিশ চন্দ্র বর্মনের স্ত্রী রঞ্জিতা রানী বলেন, হঠাৎ জ্ব-সর্দ্দি সহ শরীরে ব্যাথার ওষুধ নিতে ক্লিনিকে এসেছেন। ক্লিনিকের আপা সিএইচসিপি লায়লা আরজুমান বানু ওষুধ দিয়ে বলেছেন, ওষুধ খেলে দু-তিন দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
জানা যায়, ২০১১ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারদের (সিএইচসিপি) কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৪ জুন এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। এরপর তিন দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়নি এক টাকাও। কিন্তু গত বছরের জুলাই মাস থেকে এসব স্বাস্থ্যকর্মীর বেতন বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় বেতনসহ চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের দাবিতে ঢাকায় আন্দোলনে নামের দেশের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডাররা (সিএইচসিপি)। আন্দোলনের এক পর্যায়ে চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের আশ্বাসও পান তারা। কিন্তু এ আশ্বাসের পরও প্রকল্পে বা রাজস্ব খাত কোনোটা থেকেই তাদের বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দীর্ঘ আট মাস ধরে তারা কোনো বেতন পাননি। বেতন ভাতা না পেলেও তারা তাদের স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বেতন না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মী।
উপজেলার নন্দলালপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) মোছা. কানিজ ফাতেমা বলেন, আট মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। এতদিন ধার-দেনা করে পরিবার ও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হয়েছে। এখন ধারও দিতে কেউ চায় না।
উপজেলা রাঙামাটি কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বর্তমান সময়ে সামান্য বেতন দিয়ে খুব কষ্টে সংসার চালাতে হয়। তার উপর আবার গত আট মাস থেকে সেই সামান্য বেতন টুকুও বন্ধ রয়েছে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। ধারদেনা করে আর পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটানো খুবই কষ্ট দায়ক হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিয়মিত যোগাযোগ করেও কোনো সুরাহা পাওয়া যাচ্ছে না। হচ্ছে, হবে বলেই দিন পার হচ্ছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, উপজেলার ২৬ টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৬ জন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডারের (সিএইচসিপি) মধ্যে ২৪ কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়নের সঞ্জয় কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন যোগদান করলেও পরে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। আর একজন বেতদীঘি ইউনিয়নের সৈয়দপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) মৃত্যুবরণ করেছেন। ফলে ২৬ টি ক্লিনিকের মধ্যে ২৪ জন কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৮ মাস থেকে বেতন ভাতা পাননি। এতে তারা খুব কষ্টে আছেন। বেতন ভাতা না পেলেও গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে যাচ্ছে আগের মতোই। তবে তাদের বেতন ভাতার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিতভাবে অবগত করা হচ্ছে।