জন্মসনদ ছাড়া মিলবে না ১৯ নাগরিক সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
জন্মসনদ ছাড়া মিলবে না ১৯ নাগরিক সেবা

জন্মনিবন্ধন সনদ এখন আর শুধু একটি কাগজ নয়, নাগরিক জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল। শিক্ষা, চাকরি, পাসপোর্ট, এনআইডি থেকে শুরু করে সম্পত্তি হস্তান্তর কিংবা সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা—এসব নাগরিক সেবা পেতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে জন্মসনদ। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া অন্তত ১৯টি মৌলিক নাগরিক সেবা আর পাওয়া যাবে না।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জন্মসনদ ছাড়া পাওয়া যাবে না জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, বিদ্যালয়ে ভর্তি, ভোটার আইডি, চাকরির নিয়োগ, উচ্চশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, টিকা, ব্যাংক হিসাব খোলা, বিমা সুবিধা, সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তর, বিধবা ও বয়স্ক ভাতা সহ নানা সরকারি সুবিধা।

জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ইউএনএসকাপ ঘোষিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) দশকের আওতায় বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসডিজি’র ১৬.৯ লক্ষ্যেও জন্মনিবন্ধন ও বৈধ পরিচয়পত্রকে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

তবে পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে। বর্তমানে জন্মনিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ, যেখানে বৈশ্বিক গড় ৭৭ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৭৬ শতাংশ। মৃত্যুনিবন্ধনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের হার মাত্র ৪৭ শতাংশ, যা বৈশ্বিক গড়ের (৭৪ শতাংশ) চেয়ে অনেক কম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন নাগরিকত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভোটাধিকার ও উত্তরাধিকারের মতো মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা, বাজেট, স্বাস্থ্যসেবা ও সুশাসনের ভিত্তি তৈরি করে।

কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি আসছে না। জনসচেতনতার ঘাটতি, নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জটিলতা, প্রযুক্তিগত সমস্যা ও স্বাস্থ্যখাতের সঙ্গে সমন্বয়ের দুর্বলতা বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে আইনি দায়িত্ব দিলে নিবন্ধনের হার দ্রুত বাড়বে।

রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে এক শিক্ষার্থী নাজিউর রহমান জানান, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জন্মসনদ না থাকায় তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার অভিযোগ, “এনআইডি ও শিক্ষাগত সনদ জমা দিয়েছি, তাতেও জন্মতারিখ আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শুধু অনলাইন জন্মসনদই চাইলো।” তিনি মনে করেন, বিষয়টি আগে থেকে সবার জানানো উচিত ছিল, নইলে মানুষ ভোগান্তির শিকার হবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, নিবন্ধন সার্ভারের ত্রুটির কারণে নাগরিকদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয় এবং সেবার গতি ব্যাহত হয়। তবে তার দাবি, আগের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা জিএইচএআই–এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, “শতভাগ জন্মসনদ নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি দায়িত্ব দিলে বাংলাদেশ সহজেই ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে।”

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. যাহিদ হোসেন জানান, জন্মসনদ ছাড়া অনেক সরকারি সেবা এখন আর মিলবে না। এতে চাপ বেড়েছে বটে, তবে কারিগরি উন্নতির কারণে আগের তুলনায় সেবার মানও ভালো হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে