রাকসু নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের অভিনব প্রচারণায় উৎসবের আমেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম | প্রকাশ: ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০১:৪৭ পিএম
রাকসু নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের অভিনব প্রচারণায় উৎসবের আমেজ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসজুড়ে। দীর্ঘ স্থবিরতা শেষে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল থেকে প্রার্থীদের সরব উপস্থিতিতে জমে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। লিফলেট হাতে প্রার্থীরা ঘুরছেন বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, টুকিটাকি চত্বর ও আবাসিক এলাকার ভোটারদের কাছে। কেউ গাইছেন গান, কেউ সেজেছেন ঐতিহাসিক চরিত্রে, কেউবা তৈরি করেছেন ব্যতিক্রমী ডিজাইনের প্রচারপত্র— সব মিলিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এখন এক নির্বাচনী উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু।

গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ ইতোমধ্যে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিত, উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনের। তবে, পোষ্য কোটা ইস্যু ও পূর্ববর্তী আন্দোলনের জেরে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কিছুটা শিথিল বলে অভিযোগ করেছেন অনেক প্রার্থী।

পোষ্য কোটা ও প্রশাসনিক জটিলতা দ্রুত সমাধান করে নির্ধারিত সময়ে ভোট আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রার্থীরা। রাবি অফিসার সমিতিও রাকসু নির্বাচন পর্যন্ত তাদের আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ মাসুদ রানা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আগামী বুধবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদ মিলে এবার মোট প্রার্থী ৯০২ জন। এর মধ্যে রাকসুতে ২৩টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৭ জন প্রার্থী— ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে ১৬ জন। এছাড়া হল সংসদ নির্বাচনে ৬০০ জন এবং সিনেট নির্বাচনে ৩০৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।

মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন— এর মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। আটটি একাডেমিক ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে ৯৯০টি বুথ। ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এবং সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

রাবি ক্যাম্পাসে এখন প্রচারণায় যেন সৃজনশীলতার প্রতিযোগিতা চলছে। ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর প্রচারণার জন্য বেছে নিয়েছেন প্রজাপতির আকৃতির লিফলেট ডিজাইন। একই দলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা তৈরি করেছেন হাতের পাঁচ আঙুলের আদলে প্রচারপত্র, যেখানে প্রতিটি আঙুলে ইশতেহারের একটি করে প্রতিশ্রুতি লেখা রয়েছে।

সংস্কৃতি সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাজে প্রচারণা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি কেড়েছেন। তিনি বলেন, “বাংলার সংস্কৃতির ওপর আবারও আক্রমণ নেমে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। আমি নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাজে এসেছি প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে।”

অন্যদিকে, শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী জায়িদ হাসান জোহা কৃষকের সাজে গাইছেন গাম্ভারি গান, আর জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার তৈরি করেছেন দৈত্যরূপী পোস্টার যেখানে ব্যঙ্গাত্মক চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী সফিউল কালাম (কেএসকে হৃদয়) গান গেয়ে প্রচারণা চালিয়ে শিক্ষার্থীদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর রাবি প্রশাসন পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। ২০ সেপ্টেম্বর জুবেরী ভবনে সংঘর্ষের পর প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২২ সেপ্টেম্বর ভোটের তারিখ পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দুর্গোৎসবের ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসার পর আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।

রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হতে যাচ্ছে— যা ক্যাম্পাস রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।