মাত্র দুই বছরের চেষ্টায় তিনটি সুবিধাসম্পন্ন দেশের প্রথম হাইব্রিড গাড়ি উদ্ভাবন করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) গবেষক দল। গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে একটি পরিত্যক্ত গাড়ি। উদ্ভাবিত এই গাড়িটির জ্বালানি খরচও খুব কম হবে। দেশের প্রথম এই হাইব্রিড গাড়ি বর্তমানে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিতে চলতে পারবে। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত বাজারের অন্যান্য গাড়ীর ন্যয় এই হাইব্রিড গাড়িরও গতি বাড়ানোর উদ্ভাবন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বর্তমান অবস্থায় এই গাড়ির ব্যাটারি একবার পরিপুর্ন চার্জ হলে জ্বালানি ব্যবহার ছাড়াই একটানা আড়াইশ’ কিলোমিটার চলবে। আর গাড়ি চলতে জ্বালানির ব্যবহারে একাধিক প্রযুক্তি রাখায় কখনো জ্বালানি সংকটে গাড়িটি বন্ধ থাকার সুযোগ নেই। একটি পরিত্যক্ত গাড়ি থেকে এমন হাইব্রিড গাড়িতে রূপান্তরসহ ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা। আর সোলার সিস্টেম প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভাবনকৃত হাইব্রিট গাড়িটি খুব শিঘ্রই বিশ্ব দরবারে আলোড়ন সৃষ্টি করবে।
এ তথ্য নিশ্চিত ও প্রত্যাশাপূর্বক উদ্ভাবনকৃত হাইব্রিট গাড়ি প্রস্তুতকৃত এই গবেষক দলের প্রধান রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. এমদাদুল হক বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এখন নজর দিচ্ছে গাড়িতে জ্বালানির ব্যবহার কিভাবে কমানো যায়। কারণ বর্তমান অবস্থায় চলতে থাকলে এক সময় বিশ্বের প্রাকৃতিক জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে। তাই আমরা এমন কিছু উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছি যা জ্বালানি ব্যবহার কমাবে। আর আমাদের সেই প্রচেষ্টাও সফল হয়েছে। কারণ এই গাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে জ্বালানি খরচ অল্প এবং পরিত্যক্ত গাড়িকে স্বাধ্যের মধ্যেই খরচ করে সহজেই ব্যবহার উপযোগী করা যায়।’
উদ্ভাবিত হাইব্রিড গাড়িটির সুবিধাগুলোর বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান বলেন, ‘এই গাড়িটি একইসঙ্গে ইলেকট্রিক্যাল প্লাগ ইন, ইঞ্জিনসেবা ও সোলার চার্জিং সিস্টেম। এর ফলে জ্বালানি শেষ হলেও চলবে গাড়ি। সোলার সিস্টেম থাকায় যানজটে আটকে থাকলেও ব্যাটারি চার্জ হবে। তাই শক্তি বা জ্বালানির অপচয় হওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়াও বিদ্যুতের সাহায্যেও চার্জ দেয়া যাবে। আর একাধিক প্রযুক্তি রাখায় কখনো জ্বালানি সংকটে গাড়িটি বন্ধ থাকার সুযোগ নেই। ’
উদ্ভাবিত হাইব্রিড গাড়ি তৈরিতে গবেষক শিক্ষার্থীরা জানান, ‘রাজশাহী নগরীর একটি গ্যারেজ থেকে পরিত্যক্ত এই গাড়িটি সংগ্রহ করে হাইব্রিড গাড়িতে রুপান্তর করা হয়েছে। পোর্টেবল ডিভাইসের মতো এই প্রযুক্তিটি এখন যেকোনো গাড়ির সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে।’
জানা গেছে, ২০১৪ সালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে এই প্রকল্পটি পান রুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. এমদাদুল হক। এরপর ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু হয়। যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. এমদাদুল হকের সঙ্গে এই উদ্ভাবন কাজে অংশগ্রহণ করেন শিক্ষক ফজলুর রশীদসহ এ বিভাগে অধ্যায়নরত ২০১৩-১৪ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান, ওবায়দুল হাসান, তানভির রহমান, তরিকুল ইসলাম ও ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল হক ফরিদ। গবেষকদের ব্যাটারি দিয়ে সহযোগিতা করেন গেস্টন নামের একটি প্রতিষ্ঠান।