যশোর জেনারেল হাসপাতালকে ঘিরে দালাল চক্রের হাতে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। তাদের কাছ থেকে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়িত দালালরা। কিছুদিন তাদের দেখা না গেলও আবারও বেড়েছে তাদের দৌরাত্ম্য। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও পুরোপুরি দালাল দমনে অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আবার সচেতন মহলের দাবি করছেন দালাল বন্ধ করার আগে রাজনৈতিক দালাল ও অভ্যরণীয় যেসকল কর্মচারী নামীয় দালাল রয়েছে সেগুলোকে আগে বন্ধ করতে হবে।
অভিযোগ রয়েছে, রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে এখানকার দালালচক্র। এমনকি ভাল চিকিৎসা দেয়া কথা বলে বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। রোগী বা রোগীর আত্মীয়দের ফুসলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কমিশন ভিত্তিক বেসরকারি ক্লিনিকগুলো।
সরকারি হাসপাতালের আশেপাশে অবস্থিত বেসরকারি ক্লিনিকের কমিশন ভিত্তিক দালালরা উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদের পটিয়ে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সাথে প্রতারিত হচ্ছে রোগী বা তার স্বজনেরা।
ছদ্মবেশে জরুরি বিভাগ, বর্হিবিভাগ, সার্জারি বিভাগের আশেপাশে দালালরা ঘোরাফেরা করে রোগীদের হয়রানি করছে।
নাম প্রকাশে ইচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, প্রতিদিন সকাল ৭ টার দিকে টিকিট কাউন্টারের আশে পাশে তাদেরকে দেখা যায়। তারপর পরই চালিয়ে যায় তাদের দৈনন্দিন দালালি ধান্দা। প্রায় ৩০-৪০ জন দালাল চক্র সংক্রিয় সদর হাসপাতালের ভিতরে। রোগীদের কথার জালে ভূল বুঝিয়ে নিয়ে যায় বেসরকারি কিনিক গুলোতে। তিনি আরো জানান, হাসপাতালের কিছু সেবিকা, ওয়ার্ড বয় ও কর্মচারী রয়েছে তারা সরাসরি জড়িত না থাকলেও দালালদের সাথে যোগসূত্র করে কমিশন ভিত্তিক চুক্তিতে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে দিতে সাহয্য করে৷
এছাড়াও রাজনৈতিক দালালরা সরকার দলীয় এক জনপ্রতিনিধি ও আওয়াী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে এক নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে দালালি করছে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেয় তারা। জখমি সনদ, ধর্ষণ, সনদ ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট করে দেবার নামে লক্ষ লক্ষ কাটা হাতিয়ে নিচ্ছি এসব রাজনৈতিক দালালরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য জরুরি বিভাগের সামনে ৪ জন ও করোনারী কেয়ারের সামনে ৩ জন পুলিশ সদস্য প্রতিদিন হাসপাতাল চত্বরে নিয়োজিত থাকে। তাছাড়া হাসপাতাল প্রশাসন প্রতিনিয়ত দালাল মুক্ত করতে রাউন্ড দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও প্রকাশ্যে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দালাল চক্র। দালাল চক্র থেকে স্বজনদের রক্ষা পেতে হাসপাতাল তত্বাবধায়ক হাসপাতালের ভিতরে গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় মাইক বসানো হয়েছে। মাইককে সকাল থেকে রাত অবধি এক নাগালে দালাল বিরোধী, রোগীদের হাসপাতালে কোথায় কোন সেবা, কত পরিমাণ খরচ তা রেকডিং প্রচার করছে। তার পরেও দালালদের তৎপরতা বন্ধ হয়নি বরং বেশিই হয়েছে। হাসপাতাল প্রশাসন দালালদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। সেগুলো আবার পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
সদর উপজেলার দেয়ারা ইউনিয়ন এলাকার রহিমা নামে এক রোগী অভিযোগ করেন, কোনো রোগী হাসপাতালে এলে ডাক্তাররা অন্য হাসপাতালে রেফার করে দিলে এই সুযোগে দালালরা রোগীর স্বজনকে ফুসলিয়ে উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যায় অন্য হাসপাতালে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, দালালদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে পেশাদার কিছু দালালদের তালিকা প্রস্তÍুুত করা হয়েছে। মাঝে ভ্রাম্যমান আদালত আসলে কিছুদিন তাদের দেখা যায়নি। পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে আটক করলেও মুচলেকা দিয়ে কিছু দিনের মধ্যে তারা বেরিয়ে আসে। দালালদের মধ্যে কিছু মহিলারা আছে যারা এটার সাথে জড়িত রয়েছে।এরা হাসপাতালের ভিতরে রোগীদের নানাভাবে হেনস্ত করে। আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েও এদের দমন করতে পারছি না। আমরা বসে নেই। রোগীরা যাতে দালালের খপ্পরে না পড়ে হাসপাতালের গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় মাইক বসানো হয়েছে। টিকিট কাউন্টারের সামনে হেল্প ডেক্সসহ হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় সেবার তালিকা, মূল্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। হাসপাতাল প্রশাসন থেকে রোগী ও স্বজনেরা বেশি সচেতন হওয়ার আহবান জানান । তিনি আরো বলেন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে রাজনৈতিক দালাল দের কিছু বলা যাচ্ছে না।