প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছেড়ে শিকড়ে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। এবার ট্রেনে বিলম্ব হলেও বাসের যাত্রীরা নির্বিঘ্নে ঢাকা ছাড়ছেন। তবে বাসে বাড়ি ফেরা মানুষের বাড়তি চাপ না থাকলেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
রোববার সকালে এক পুলিশ কর্মকর্তা বাড়তি ভাড়া দিয়ে কেনা টিকিটের ছবি তুলে ফেসবুকে আপ করেন। তিনি লেখেন, 'ঢাকা টু নোয়াখালী পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, দেখার কেউ নেই।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি টেলিফোনে বলেন, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে নোয়াখালী যাওয়ার উদ্দেশে সায়েদাবাদ থেকে একুশে পরিবহনের এসি বাসের তিনিটি টিকিট কাটেন। অন্য সময়ে এসি বাসের টিকিট ৪৫০ টাকা হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। বাড়তি ১৫০ টাকা দিয়ে তিনি তিনটি টিকিট কেটেছেন। এ ছাড়া নন এসি বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা, যা অন্য সময়ে ৩৮০ টাকা।'
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একটার পর একটা বাস আছে, বাসের কোনো সংকট নেই। মনে হচ্ছে যাত্রীর চেয়ে বাস বেশি, তবুও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
রাজধানীর কয়েকটি বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় থাকলেও বাড়তি চাপ নেই। ফলে কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই বাসের যাত্রীরা গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে পারছেন। হয়রানি রোধে মহাখালী বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), র্যাব, পুলিশ এবং সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সময় মতোই বাসগুলো গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে। তবে অধিকাংশ কাউন্টারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একতা পরিবহনে করে বগুড়া যাওয়ার জন্য ৫০০ টাকায় টিকিট কেটে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন আনোয়ার হোসেন নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘বগুড়ার ভাড়া অন্য সময় ৩৫০ টাকা। এখন বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই ৩৫০ টাকার টিকিট ৫০০ টাকায় কিনেছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্টারম্যান মো. আমিন বলেন, গাইবান্ধা পর্যন্ত হিসাব করে ৫০০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়ক ছাড়া আর কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যে পৌঁছতে পেরেছেন। গাবতলী টার্মিনালের বাস মালিক এবং চালকরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ে গাড়ি ছাড়ছে। ফিরতেও পারছে নির্দিষ্ট সময়ে।
অন্যদিকে স্বস্তির যাত্রার আশায় ট্রেনে ভিড় হলেও সড়কের তুলনায় এবার রেলেই ভোগান্তি বেশি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের 'রাজশাহী এক্সপ্রেস' কমলাপুর থেকে যাত্রা করে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের রাজশাহীগামী 'সিল্ক্কসিটি' বিকেল ৫টায় কমলাপুরে পৌঁছে। খুলনাগামী 'সুন্দরবন এক্সপ্রেস' এক ঘণ্টা দেরিতে এবং 'চট্টগ্রাম মহানগর প্রভাতী' কমলাপুর থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করে আধা ঘণ্টা দেরিতে।
ট্রেনের সূচিতে গড়বড়ের কারণে যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। শনিবার সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহান রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। বিকল্প রেক দিয়ে শনিবার ট্রেনটি চালানো হয়। এতে যে আসন নির্ধারণ করে টিকিট বিক্রি করা হয় তার সঙ্গে মিল ছিল না। একটি বগিও ছিল কম।
কমলাপুরে যাত্রীর চাপ থাকলে ভিন্ন চিত্র ছিল সদরঘাটে। সেখানে যাত্রীর ভিড় স্বাভাবিক সময়ের মতোই। নির্ধারিত সময়েই ছেড়েছে অধিকাংশ লঞ্চ।