১৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। এতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৫৭৫ কোটি টাকা, যা গতবারের তুলনায় ৮ শতাংশ কম। অন্যদিকে টিভি ও অনলাইনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান সরবরাহকারীর ওপর মূসক আরোপ করা হয়েছে। এতে বাড়বে সৃষ্টিশীল এ অনুষ্ঠানগুলোর নির্মাণ খরচ। দুটি বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষেরা। গত দুই দিন ধরে বিষয়গুলো নিয়ে ফেসবুকে জোর প্রতিবাদ চলছে। বাজেট কমার পাশাপাশি টিভি ও অনলাইন মাধ্যমে অনুষ্ঠান সরবরাহকারীর ওপর মূসক আরোপের বিরুদ্ধে সোচ্চার শিল্পী-কুশলীরা। বিশেষ করে নির্মাতা, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পীদের একটি কমন স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে দুদিন ধরে। সেটি এমন−‘টেলিভিশনের এখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছে! সবাই বাজেট বাড়ানো নিয়ে কথা বলছে, প্রফেশনালিজম নিয়ে কথা হচ্ছে! কিন্তু ঠিক সেই সময়ে সরকার টেলিভিশন এবং অনলাইন অনুষ্ঠান সরবরাহের ওপরে নতুন করে মূসক বসালেন বাজেটে! একটি রুগ্ণ শিল্পকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেন! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাঁচতে দিন, টেলিভিশন ও অনলাইন অনুষ্ঠানের মূসক প্রত্যাহার করুন।’
এই স্ট্যাটাসটি অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ, তমালিকা কর্মকার, নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, পিকলু চৌধুরীসহ টিভি অঙ্গনের বেশিরভাগ শিল্পী-কুশলীরা ফেসবুকে শেয়ার করছেন। সময়ের অন্যতম ব্যস্ত নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশার একটি খবর। কারণ, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে সামনে রেখে আমাদের নাটক শিল্পটা নতুন দিগন্ত খুঁজে পেয়েছে। আমরা এখন এই নতুন মাধ্যমটিকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছি। লক্ষ করবেন, এখন আমাদের প্রায় ৯০ ভাগ দর্শক অনলাইনভিত্তিক। আমাদের নির্মাণ পরিকল্পনাও এখন তাদের ঘিরেই। অথচ এই বিকাশমান অনলাইন মাধ্যমে মূসকের (মূল্য সংযোজন কর) ভার চাপিয়ে দেওয়া হলো। এমনিতেই আমরা থাকি বাজেট সংকটে, তার সঙ্গে যুক্ত হলো মূসক! এটা বাস্তবায়ন হলে আমাদের তো দাঁড়ানোর জায়গাটাও থাকবে না।’ এদিকে গত বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫১০ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেট ছিল ৬২৫ কোটি টাকা। এবার এ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত বাজেট ৫৭৫ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও। আজ সকালে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছবলেন, ‘বাজেট কমাটা দেশের সংস্কৃতির জন্য আশঙ্কার। তাই আমরা বাজেট বৃদ্ধির দাবি পেশ করলাম। শুধু উন্নয়ন হলে হবে না। হতে হবে অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার মানুষ। যার জন্য সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসার খুব জরুরি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে নজরে আনবেন বলেই আমরা মনে করছি।’
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটকে বিশ্লেষণের দাবি করলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। তিনিবলেন, ‘আমি শুনলাম গত কয়েকটি বছরের বরাদ্দকৃত বাজেট ফিরে গেছে। মানে টাকা থাকলেও সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। একটা বাজেট বরাদ্দ হওয়ার পর যদি তা ফিরে যায়, তাহলে সাংস্কৃতিক অথরিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমাদের সাংস্কৃতিক নেতৃত্বগুলো দক্ষ করে তুলতে হবে। গত কয়েক বছরে দেশে ৪-৫টি অডিটোরিয়াম গড়ে তোলা গেছে? আমার তো মনে হয় না। বাংলাদেশ শিল্পকলাসহ দেশের সংস্কৃতির নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা এটি। আবার ২০২০-২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসব হবে। এগুলোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এগুলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেটের মধ্যে না বাইরে, এগুলো নিয়েও আমাদের বসতে হবে।’
মূসক বৃদ্ধি নিয়ে এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, ‘আমি মনে করি এটা আমাদের শিল্পকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটা প্রত্যাহার হওয়া উচিত।’
এদিকে আজ বিকাল ৫টায় দেশব্যাপী প্রতিবাদ সভা ডেকেছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। ঢাকা মহানগরে শিল্পকলা একাডেমির প্রবেশপথের মুখে বসবে এ সভা। একই সময়ে সারা দেশে প্রতিবাদ সভা করবে ফেডারেশনের সব শাখা।
বিকালের এ আয়োজনে তাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্প সংস্কৃতি যেন ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে। এমন বাজেট সংস্কৃতি শেষ করেই ছাড়বে।’