বেসরকারি পর্যায়ের হজযাত্রীদের থাকার জন্য সৌদি আরবে এখনো বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করতে পারেনি বিপুলসংখ্যক হজ এজেন্সি। ফলে হাজার হাজার হজযাত্রীর ভোগান্তির শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ সৌদি সরকারের পূর্ব শর্তানুযায়ী ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া ১৫ জুনের মধ্যে মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি তালিকাভুক্ত ২৮৭টি হজ এজেন্সি। সৌদি সরকার এবার বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে কঠোর হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক হজ এজেন্সিই ছোট ছোট মানহীন রুম বা নামসর্বস্ব হোটেলের রুম ভাড়া করে হজযাত্রীদের গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য করে। বাথরুমের জন্য তাদের দীর্ঘ লাইন দিতে হয়।
অনেক সময় কোথাও ৩ জন হজযাত্রী, আবার কোথাও ১০জন হজযাত্রীকে রাখা হয়। এসিবিহীন রুমে রাখায় প্রচ- গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব কারণে একই গ্রুপে হজে যাওয়া অনেকে সঙ্গীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এবার সৌদি সরকার ন্যূনতম ৫০ জন থাকতে পারেন আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এমন বাড়ি ও হোটেল ভাড়া বাধ্যতামূলক করেছে। এসি সুবিধাসহ উন্নতমানের খাবারের বিষয় নিশ্চিতের শর্তও দিয়েছে। আর ওসব শর্তের কারণে বেকায়দায় পড়েছে বাংলাদেশের নামসর্বস্ব প্রতারণাকারী হজ এজেন্সিগুলো। ধর্ম মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সৌদিতে বাড়ি ভাড়া নিশ্চিত না হওয়ায় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীদের নির্দিষ্ট সময়ে ভিসা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের পবিত্র হজ পালনের কথা। তার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজার ১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৯৮টি এজেন্সির মাধ্যমে এক লাখ ২০ হাজার জনের হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। আগামি ৪ জুলাই বিমানের হজ ফ্লাইট শুরু হবে। ইতোমধ্যে সরকারি হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে বেসরকারি পর্যায়ের হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন না করায় এ বছরও হজে জটিলতা এবং ভোগান্তির আশঙ্কা করছে হজ অফিস এবং হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। বাড়ি ভাড়া না করা থাকলে সৌদি সরকার পবিত্র মক্কা-মদিনায় ভিসা দেবে না। এ বছর বিমানের জন্য অতিরিক্ত ফ্লাইট বরাদ্দও পাওয়া যাবে না। যেসব এজেন্সি এখনো মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি, তারা বিমানের টিকিটও নিশ্চিত করতে পারছে না।
সূত্র জানায়, আগামি ৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর ৩২ দিনে ১৫৭টি ডেডিকেটেড ও ৩২টি সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। এ বছরই প্রথম ঢাকায় হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। ফলে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে গিয়ে ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। বিমানবন্দর থেকে তারা সরাসরি হোটেল বা বাড়িতে চলে যাবেন। সেজন্য বাড়ি ও হোটেলের ঠিকানা ছাড়া হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। আর ফ্লাইটের এক দিন আগেই হজযাত্রীদের তথ্য সৌদি আরবে পাঠাতে হবে। ওই সময়ের পর ফ্লাইটে নতুন কোনো যাত্রী নেয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে হজ এজেন্ট ও যাত্রীদের তাদের ফ্লাইট ছেড়ে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগেই যাত্রার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। নির্ধারিত সিডিউলের বাইরে অতিরিক্ত স্লট দেবে না সৌদি সরকার। জটিলতা এড়াতে এ বছর কোনো যাত্রী হজ ফ্লাইটের যাত্রা বাতিল করলে বা সময় পরিবর্তন করলে জরিমানা আদায় করবে বিমান।
এদিকে এ প্রসঙ্গে হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, সৌদি সরকারের হজ কার্যক্রমের অনলাইন সিস্টেমে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই পূর্ব ঘোষণা দিয়েও ভিসা কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। ওসব জটিলতা নিরসনে হাবের পক্ষ থেকে গত ১৭ জুন চিঠি দেয়া হয়েছে। ন্যূনতম ৫০ জনের উপযোগী বাড়ি ভাড়া পাওয়া এখন কঠিন হয়ে গেছে। এ নিয়ম শিথিল করা না হলে জটিলতার সমাধান হবে না।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ জানান, হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা ঠেকাতে ও দুর্ভোগ কমাতে হজ এজেন্সিগুলোর জন্য কঠিন বিধিনিষেধ দিয়েছে সৌদি সরকার। গত ১৮ জুন থেকে হজযাত্রীদের ভিসা দেয়ার কথা। কিন্তু এখনও তা শুরু হয়নি। আশা করা যায় শিগগিরই ভিসা কার্যক্রম শুরু হবে। কোনো হজ এজেন্সি হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে- এমন প্রমাণ পেলে সংশ্নিষ্ট এজেন্সিকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ জরিমানা আদায় করা হবে।