সরকার দেশে শিল্প-কারখানার তথ্যসংবলিত ডাটাবেজ তৈরি করছে। কারণ শিল্প-কারখানায় উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং শিল্প-কারখানার সুষম বিকাশে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৪ হাজার ৮০৮টি তৈরি পোশাক কারখানার ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন খাতের আরো ২৭ হাজার কারখানার তথ্যসংবলিত ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ করছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে শ্রম আইন ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিদর্শন চেকলিস্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রম পরিদর্শকরা মাঠপর্যায়ে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করছে। বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় মোট নিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ২৬ হাজার ৯৫৩টি। তার মধ্যে পোশাক খাতের কারখানা ৪ হাজার ৬৬৭টি। অন্যান্য খাতের কারখানা ২২ হাজার ২৮৬টি। পোশাক ও অন্যান্য মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি কারখানা আছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে।
সূত্র জানায়, ঢাকা জেলায় নিবন্ধিত মোট কারখানার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৩০টি। তার মধ্যে পোশাক কারখানা ১ হাজার ৮৪৮টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ৩ হাজার ৮২টি। নারায়ণগঞ্জ জেলায় মোট নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৬৩৫টি। তার মধ্যে পোশাক খাতের কারখানা ৭৪৭টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ১ হাজার ৮৮৮টি। গাজীপুর জেলায় মোট কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ৮০০টি। তার মধ্যে পোশাক খাতের কারখানা ১ হাজার ৩৯০টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ১ হাজার ৪১০টি। চট্টগ্রামে মোট কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১৭৮টি। তার মধ্যে পোশাক খাতের কারখানা ৫৭৭টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ২ হাজার ১৭৮টি। ময়মনসিংহে মোট কারখানার সংখ্যা ৭৩৩টি। তার মধ্যে পোশাক খাতের কারখানা ৪৫টি এবং অন্যান্য খাতের কারখানা ৬৮৮টি।
সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন সময়ে নানা কাজে শিল্প-কারখানা ও শ্রমিকের তথ্য প্রয়োজন পড়ে। শ্রমিক কল্যাণমূলক কাজ ছাড়াও শ্রম আইন বাস্তবায়নে আইনগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ডিআইএফইর কাছে শিল্প ও শ্রমিকের তথ্য থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রয়োজনের সময় যাতে তাদের তথ্য পাওয়া যায় সেজন্যই তথ্যভাণ্ডারটি করা হচ্ছে। মূলত শিল্প কমপ্লায়েন্স রক্ষার্থেই তথ্যভাণ্ডারের কাজটি ডিআইএফইর মাধ্যমে করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ হাজার ২৬১টি কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা হয়েছে। শিল্প কমপ্লায়েন্স রক্ষার পাশাপাশি সুষম শিল্প বিকাশেও তথ্যভাণ্ডারটি ব্যবহার করা হবে। কারণ তথ্যভাণ্ডারে জেলাভিত্তিক কারখানার পরিসংখ্যান স্পষ্ট। বর্তমানে ৫টি জেলায় দেশের শিল্প-কারখানাগুলো কেন্দ্রীভূত। ২৭ হাজার শিল্প-কারখানার মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় রয়েছে ৫০ দশমিক ৭৫ শতাংশ কারখানা।
অন্যদিকে বিশ্লেষকদের মতে, দেশের অল্প কয়েকটি স্থানে কারখানাগুলো কেন্দ্রীভূত হওয়ায় ওসব অঞ্চলের ওপর চাপ বাড়ছে। তাতে সড়ক যোগাযোগ ও ভৌত অবকাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে শিল্প। অপরিকল্পিত শিল্পাঞ্চলগুলোর পরিবেশ সুরক্ষা খরচ ও নতুন নতুন সংশোধন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে শিল্পের মানোন্নয়ন খরচ। পাশাপাশি অনেক বেশি কারখানা থাকায় দরকষাকষির সুযোগ না পেয়ে শ্রমিকের সহজলভ্যতা হারাচ্ছে কারখানা। ফলে সার্বিকভাবেই কারখানার বিদ্যমান নিবিড়তায় দীর্ঘমেয়াদে অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে শিল্পের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি।
এ প্রসঙ্গে ডিআইএফইর যুগ্ম-মহাপরিদর্শক ফরিদ আহম্মেদ জানান, শিল্প-কারখানার ডাটাবেজ তৈরির কাজটা চলমান রয়েছে। এখন শিল্প-কারখানাগুলোর তথ্যভাণ্ডার করা হচ্ছে। এ তথ্যভাণ্ডারে সব খাতই আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে ৫ জন শ্রমিক উৎপাদনে সম্পৃক্ত থাকলেই সেটিকে কারখানা বিবেচনা করা হচ্ছে। কোনো প্রকল্পের আওতায় নয়, ডিআইএফইর উদ্যোগেই এ তথ্যভা-ার তৈরি করা হচ্ছে।