ঝালকাঠির নলছিটিতে গাঁজা সেবনের অভিযোগে এক যুবককে গণপিটুনি দিয়ে ১৫ পুড়িয়া গাঁজাসহ পুলিশে সোপর্দ করেছে এক ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। আহত যুবকের অভিযোগ অমানবিক নির্যাতন শেষে তার হাতে গাঁজা ধরিয়ে দেয় চেয়ারম্যানের লোকজন। এ সময় তারা মোবাইলফোনে গাঁজাসহ তার ছবি ও ভিডিও করে রাখে। উপজেলার নাচনমহল বাজার সংলগ্ন ব্রীজের ঢালে বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ আহত যুবককে উদ্ধার করে ওইদিন বিকেলে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ ঘটনায় রাতে ওই যুবকের পিতা বাদি হয়ে নলছিটি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার নাচনমহল গ্রামের মো. কাদের খলিফার ছেলে মোটর মেকানিক মো. রিয়াজ খলিফাকে (৩০) তার দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে রানাপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে যান স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসী। ওই যুবকের কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে অভিযোগ তুলে তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে তারা। এরপর স্থানীয় মোল্লারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন ঘটনাস্থলে এসে ফের ওই যুবককে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ আহত যুবককে উদ্ধার করে নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহত রিয়াজ খলিফা জানান, ‘পূর্বশত্রুতার জের ধরে শাহাদাত মোল্লা, সুমন, মিজানসহ আরো কয়েকজন যুবক আমার দোকানে এসে ক্যাশ থেকে উঠে দাড়াতে বলে। এরপর আমার দোকানে গাঁজা পাওয়া গেছে অভিযোগ তুলে তারা আমাকে ধরে পার্শ্ববর্তী স্কুল বাড়ি (রানাপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়) নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। এরপর তারা ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেনকে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে ফের আমাকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায় তিনি আমাকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি অমানবিক নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে তার প্রস্তাবে রাজি হলে চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গরা আমার হাতে ১৫ পুড়িয়া গাঁজা দিয়ে পুলিশের হাতে তুল দেন। এরআগে মোবাইলফোনে তারা আমার ছবি ও ভিডিও করে রাখে।’
অভিযোগের ব্যাপারে মোল্লারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন বলেন, ‘রিয়াজ খলিফাকে মারধরের ঘটনায় আমি কোনভাবেই জড়িত নই। অহেতুক আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘রিয়াজকে গাঁজাসহ আটকের পর এলাকাবাসীরা আমাকে জানায়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে তারা ওই যুবককে থানায় নিয়ে যায়।’
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, মোটর মেকানিক রিয়াজ খলিফাকে মারধরের ঘটনায় তার পিতা কাদের খলিফা বাদি হয়ে মিজান, সুমন, শাহাদাত ও দোলোয়ার নামে চারজনকে আসামি করে নলছিটি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে প্রকাশ্য দিবালোকে উপজেলার নাচনমহল ব্রীজের দক্ষিণ ঢালে সাইদুল ইসলাম তালুকদার নামে এক যুবককে কুপিয়ে হাত-পা কেটে হত্যা ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ওই মামলার প্রধান আসামি হিসেবে দীর্ঘদিন জেলাহাজতে ছিলেন তিনি। এরআগে ঋণ প্রদানের সুপারিশ না শোনায় কৃষি ব্যাংকের তালতলা শাখা ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাইনুর রহমানকে মারধর করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়ায় মামলায় তাকে আসামি করা হলে বেশ কিছুদিন জেলহাজতে ছিলেন তিনি।