২০১৮ সালের ২ নভেম্বর শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের সম্প্রসারিত ২৫০ শয্যার ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখনও নতুন ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে জেলা পর্যায়ে রোগীদের দুর্ভোগ ক্রমেই চরম আকার ধারণ করছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নবনির্মিত এই ভবনে বেশ কিছু ত্রুটি রয়েছে। এ কারণে ভবনটি গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আর গণপূর্ত বিভাগ বলছে, তারা নির্মাণ করলেও এ ভবনের নকশা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ীই কাজ হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে সীমান্তবর্তী অঞ্চল শেরপুরকে জেলায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু তখনও জেলা সদর হাসপাতালটি ছিল ৫০ শয্যার। দীর্ঘদিন পর তা ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও রাজস্ব খাতে ছিল ৫০ শয্যাই। এই অবস্থায় জেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ১০০ শয্যার হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর শহরের নারায়ণপুর এলাকায় এ হাসপাতালের পাশে এক একর ১০ শতাংশ জমির ওপর ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আট তলা ভবনের প্রকল্প হাতে নেয় গণপূর্ত বিভাগ।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর জেলা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারদলীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিক। এর প্রায় তিন বছরের মাথায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহে বিভাগের অন্য জেলার মতো ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালসহ শেরপুরের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই ঘোষণার দীর্ঘ ১০ মাসেও চালু হয়নি নতুন ভবনে জেলা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য বিভাগ ও গণপূর্ত বিভাগের মতবিরোধে ঝুলে আছে চালুকরণ প্রক্রিয়া। এখনপর্যন্ত ১০০ শয্যার হাসপাতালে রোগীর প্রচ- চাপ। এখানে ১০০ বেডের বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ রোগী ভর্তি থাকে। ফলে অধিকাংশ রোগীকে বেড ছাড়া নিচে ফ্লোরে থাকতে হয়।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম আঁধার বলেন, জেলা সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে সম্প্রসারিত নতুন ভবনের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভাগীয় শহর থেকে তা উদ্বোধন করেন। এটি জেলার স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। কিন্তু উদ্বোধনের দীর্ঘ ১০ মাসেও তা চালু না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। এটি যত দ্রুত চালু করা যায় ততোই শেরপুরবাসীর জন্য মঙ্গলজনক। একই কথা জানিয়ে জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. এমএ বারেক তোতা বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। এখন শেরপুরে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে মানুষের অধিকতর সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কিন্তু ভবনে ত্রুটি বা সমস্যার কারণে যদি তার চালুকরণ থেমে থাকে, সেটা অনভিপ্রেত।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলা সদর হাসপাতাল সংলগ্ন সম্প্রসারিত নতুন ভবনে আইসিইউ ও সিসিইউসহ আধুনিক সব ধরনের চিকিৎসা সুযোগ-সুবিধা রাখা রয়েছে। ভবনটি হস্তান্তর করলেই জনগণ প্রকৃত সেবা ভোগ করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, ভবনটি হস্তান্তর ও গ্রহণের জন্য গত এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত বারবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেওয়া হেেয়ছে। কিন্তু সার্ভে শেষ না হওয়ার কথা বলে তারা ভবনটি এখনও গ্রহণ করছেন না। তিনি বলেন, ভবনের নকশা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আমরা সেই নকশা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করেছি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. রেজাউল করিম বলেন, নবনির্মিত এই ভবনে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো হচ্ছে, এই ভবনে কমন বাথরুম ছাড়া চিকিৎসকদের বসার রুমে কোন এটাচড বাথরুম নেই। ওয়ার্ডের রুমে কোন ওয়াশরুম নেই। এ ছাড়া অপারেশন থিয়েটারেও রয়েছে সমস্যা। যে কারণে ভবনের কাজের বিষয়ে জেলা সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সার্জন ডা. রবিউল করিমকে আহ্বায়ক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ নাদিম হাসানকে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্যের একটি সার্ভে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সার্ভে বোর্ডের প্রতিবেদন পাওয়ার পর ভবনটি গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, সম্প্রসারিত নতুন আট তলা ভবনে ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল চালু না হওয়ার বিষয়ে ময়মনসিংহে বিভাগীয় সমন্বয় সভায় কথা হয়েছে। সভায় উপস্থিত থাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আগামি ১ মাসের মধ্যে তা চালুকরণে আশ্বস্ত করেছেন।