শ্রাবণের শেষ দিকে একটু বৃষ্টিপাত হওয়ায় মনিরামপুরের পাট চাষিদের মধ্যে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। খানা-খন্দকে, বিল-খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমে যাওয়ায় পাট পচানোর জন্য জাঁগ দেওয়া এবং আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অপরদিকে পাট পচানো এবং আঁশ ছাড়ানো নিয়ে তারা আশার আলো দেখলেও বাজার মূল্য নিয়ে রয়েছে হতাশায়ও রয়েছে তাদের।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, এ বছর মনিরামপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৩’শ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ৫ হাজার ৫’শ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২’শ হেক্টর কম জমিতে চাষ হয়েছে। এখানকার চাষিরা মূলত: শ্রাবণ মাসের প্রথম দিকে জমি থেকে পাট কেটে আমন ধানের চাষ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবার আশানুরূপ পাট চাষ সম্ভব হয়নি। দেরিতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় চাষিরা এখন পাট পচানোর জন্য জাঁগ দেওয়া, সোনালী আঁশ ছাড়ানো এবং গুকানোর কাজ শুরু করেছেন।
উপজেলার দেবীদাসপুর গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর ৪৪ শতক জমিতে তিনি পাট চাষ করে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়ে ছিলেন। তার দাবী মতে জমি থেকে পাট কেটে পচন দেওয়ার জায়গা না পাওয়ায় রাস্তায় ফেলে রেখে অনেক পাট নষ্ট হয়ে গেছে। তবে কিছু পাট জমি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে হরিহর নদীতে জাঁগ দিতে পারায় কিছুটা খরচ বাঁচানোর সম্ভবনা দেখছেন।
অপর দিকে আ¤্রঝুটা গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে বর্গায় পাট চাষ করে। ফলনও ভালো। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় এত দিন হতাশায় কেটেছে। গত সপ্তাহে কয়েক ফসলা বৃষ্টিপাত হওয়ায় চিন্তা কিছুটা লাঘব হয়েছে। তবে পাট পচানোর জন্য জাঁগ দিতে লাভের অংশটা চলে যাচ্ছে পরিবহন এবং অতিরিক্ত শ্রমিকের মুজুরি খরচে। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, জমি থেকে ১ কিলোমিটার দূরে শ্রী নদীতে পাট জাঁগ দিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ, জাঁগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো, পাটখড়িসহ তা আবার বাড়িতে বহন করে আনতে, তা শুকাতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। যা পুরো লাভের অংশটাই চলে যাচ্ছে পাটের পেছনে।
কাজিয়াড়া গ্রামের মতলেব গাজী জানান, ১ বিঘা (৪২ শতক) জমিতে পাট বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ শুকিয়ে ঘরে উঠাতে খরচ হয় তার প্রায় ১৪/১৫ হাজার টাকা। তিনি দাবী করেন, এত খরচ করে পাট পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ মণ। যা বাজারে প্রতি মণ পাট বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫’শ টাকা দরে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে এত পরিশ্রমের পরও পাট চাষ করে কোন লভ্যাংশ ঘরে আসছে না। কেবল মাত্র বাড়িতে থাকছে পাটখড়িগুলো (জ¦ালানী)। পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় পাট চাষে অনিহা আসছে চাষিদের মধ্যে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হীরক কুমার সরকার জানায়, এ বছর পাটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২’শ হেক্টর কম জমিতে চাষ হলেও চাষিরা ফলন আশানুরূপ পেয়েছেন। তবে পাটের বাজার মূল্য নিয়ে চাষিদের মধ্যে একটু ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।