আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা - ২০১৯ শুরু হতে যাচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা এটি। পরবর্তি স্তরের শিক্ষার সুযোগের জন্য এই পরীক্ষায় উত্তোরণের একটা চাপ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। শুধু শিক্ষার্থী নয়, অভিভাবকগণও উৎকন্ঠায় থাকেন তাদের সন্তানের ফলাফল কেমন হবে এই চিন্তায়। আমাদের দেশে এখনও অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যরাও পরীক্ষায় অধিক নম্বর প্রাপ্তিই শিক্ষার্থীর সফলতা বা কৃতিত্ব বলে মনে করছেন। শিক্ষার্থী কিভাবে পরীক্ষায় অধিক নম্বর পেতে পারে এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এর চেষ্টার অন্ত নাই। পদ্ধতিগত কিছু বিষয় এবং কিছু বিষয়ে অজ্ঞতা বা অসচেতনতার কারণে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় কম নম্বর পাচ্ছে। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় প্রতিপালন করলে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অধিক নম্বর পেতে পারে:
১। পরীক্ষা কক্ষে তোমরা ইতিবাচক মনোভাব রাখবে। কোন প্রকার দু:চিন্তা করবে না। নিজের বিদ্যালয়ের মত স্বাভাবিক পরিবেশ মনে করে পরীক্ষা দিবে। তবে শরীর সুস্থ রাখাও জরুরী। এজন্য সতর্কতা অবলম্বন করবে।
২। মনে রাখবে, পরীক্ষায় যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লিখতে বলা হবে, সেগুলো তোমার পাঠ্যবই সংশ্লিষ্ট। তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর তোমাকে চিন্তা করে দিতে হবে। তোমাকে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে তুমি সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। উত্তরপত্র পাওয়ার পর প্রথমেই সঠিকভাবে মার্জিন দিয়ে দিবে।
৩। প্রশ্নপত্রটি (অভীক্ষা) হাতে পাওয়ার পর প্রথমেই ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে পড়বে। প্রশ্নপত্রে কী চাওয়া হয়েছে সেটা ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বদা নির্দেশনা অনুসরন করবে। অনেক সময় তোমরা প্রশ্নপত্রটি পেয়েই লেখা শুরু কর। এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং নম্বর ও কম আসে।
৪। কোন প্রশ্নে কতটুকু উত্তর চাওয়া হয়েছে ঠিক ততটুকুই লিখতে লিখবে। নির্দেশনার বেশি লিখলে এর জন্য অতিরিক্ত কোন নম্বর পাওয়া যাবে না। উপরন্তু সময় নষ্ট হবে। যেমন: প্রশ্ন: চারটি শীতকালীন ফুলের নাম লেখ। এখানে নম্বর বন্টন আছে ৪। এক্ষেত্রে ৪ টির বেশি ফুলের নাম লিখলেও অতিরিক্ত কোন নম্বর পাওয়া যাবে না, শুধু সময় নষ্ট হবে।
৫। তোমরা অনেক সময় মুখস্ত করা বিষয়বস্তু ভুলে যাও এবং ধারাবাহিকতা হচ্ছে কি না এই ভয়ে লেখা বন্ধ করে দাও। তোমার নিজের ভাষাতেও যদি কোন বিষয় বোঝাতে সক্ষম হও তাহলেও তুমি পূর্ণ নম্বর পাবে।
৬। সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর লেখার সময় শুধু সঠিক উত্তরটি উত্তরপত্রে লিখলে হবে। পূর্ণ বাক্যে লেখার প্রয়োজন নেই। এতে সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু নয়। যেমন: ঢাকা কোন নদীর তীরে অবস্থিত? শুধু বুড়িগঙ্গা লিখলেও পূর্ণ নম্বর পাবে। “ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত” এভাবে লেখার প্রয়োজন নেই।
৭। মিলকরনের জন্য পাঠ্যবইয়ে দেওয়া বিষয়বস্তু ভালভাবে পড়বে। প্রশ্নে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী ( দাগ টেনে, পাশাপাশি লিখে বা ক্রমিকে মিল করে) লিখতে হবে।
৮। সবচেয়ে বেশি নম্বর বন্টন থাকে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নে। এ জাতীয় প্রশ্নে উত্তর কতটুকু লিখতে হবে তা প্রশ্নেই নির্দেশ দেওয়া থাকে। প্রশ্নের একাধিক অংশও থাকে। তাই কোন অংশের উত্তর অজানা থাকলে অন্য অংশের উত্তর লিখলে তার জন্য বন্টিত পূর্ণ নম্বর পাওয়া যাবে।
৯। বিপরীত শব্দ,সমার্থক শব্দ, এককথায় প্রকাশ, শুণ্যস্থান ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে সঠিক বানানের শব্দ লিখবে।
১০। দরখাস্ত/চিঠির ক্ষেত্রে প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা নম্বর আছে। এজন্য কোন অংশ অজানা থাকলে অন্যান্য অংশ লিখতে হবে। যেমন- তারিখ ও ঠিকানা; সম্বোধন (জনাব/মহোদয়); মূল অংশে- দরখাস্তের কারন, স্বপক্ষে যুক্তি; স্বাক্ষর প্রতিটির জন্য নম্বর বিভাজন করা আছে।
১১। গাণিতিক সমস্যার সমাধানে ৪টি পর্যন্ত ধাপ বা পর্যায়ও আসতে পারে। অর্থ্যাৎ যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধান করতে হতে পারে। তাই তোমরা যতটুকু পারবে ততটুকু সমাধান করলেও আংশিক নম্বর পাবে। গাণিতিক সূত্রগুলো অধিক অনুশীলন করবে। কারণ সূত্র মনে না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
১২। হাতের লেখা ঘষা-মাজা, কাটাকাটির জন্য বিষয়বস্তু পড়তে সমস্যা না হলে সঠিক নম্বর পাবে। তবে যথাসম্ভব কাটাকাটি বা ঘষা-মাজা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে। কারণ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সবাই পছন্দ করে।
১৩। যেহেতু ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের পরীক্ষা তাই শেষ ১৫ মিনিট উত্তরপত্র রিভাইস এর জন্য কাজে লাগাবে। অনেক সময় অজান্তেই কিছু বিষয় ভুল হয়ে যায়। এজন্য সময় থাকলে যাচাই করে সেই ভুলগুলো সংশোধন করা যায়।
সর্বপরি পরীক্ষা শেষে উত্তরপত্র দায়িত্বরত শিক্ষকের হাতে পৌছানো নিশ্চিত করে কক্ষ ত্যাগ করবে। উত্তরপত্রের সাথে যাতে অবাঞ্ছিত কোন কাগজপত্র না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবে।