সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সড়কের বাজারে অবৈধ পথে ভারত থেকে আসা গরুর হাট চলে আসছে প্রায় বছরখানেক ধরে। সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কানাইঘাটের পাহাড় ঘেষা ডনা সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসছে এসব গরু মহিষ। ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা ট্রাক ্র লরি বোঝাই করে এসব গরু নিয়ে যান। ভারত সীমান্ত থেকে সড়কের বাজার পর্যন্ত কানাইঘাটের বিভিন্ন পথে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু মহিষ নিয়ে আসায় যাতায়াতের সড়কগুলি, সুরমা নদীর তীর, জমির ফসল মারাতœক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিবাদ জানায় স্থানীয়রা। বিষয়টির প্রতি বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর কারণে গত দুই দিনে সড়কের বাজার এলাকার কানাইঘাট-জকিগঞ্জ, গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম ও জকিগঞ্জ-সিলেট সড়কে হাজার হাজার গরু আটকা পড়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে গাড়িতে করে নিয়ে আসা এসব পশু সময় মতো বিক্রি না হওয়ায় খাদ্যাভাব ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে গত দুই দিনে ৮/১০টি গরু মারা গেছে বলে জানা গেছে। কানাইঘাটের ঠাকুরের মাটি, কাজীরগ্রাম, দর্পননগর, করচটি, কুঁড়ের মাটি, দীঘির পাড়, বাল্লা জকিগঞ্জের খিলোগ্রাম, কোনাগ্রাম, চক, নোয়াগ্রাম,ডেমারগ্রামসহ মমতাজগঞ্জের আশপাশের গ্রামগুলির বাঁশঝাড়, সুপারি বাগান, বাড়ির আঙ্গিণা, সুরমা নদীর তীরে রাখা হয়েছে হাজার হাজার গরু মহিষ। প্রশাসন নড়ে নচে বসায় সড়কের বাজারে আপাতত গরু ক্রয় বিক্রি না হলেও উল্লিখিত গ্রামগুলিতে হাটের মতোই গরু বেধে রাখা হয়েছে। খাদ্যাভাবে গরুগুলি ছটফট করছে। অভিযোগ রয়েছে, বিজিবি, পুলিশ প্রশাসন, কিছু জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বছরখানেক ধরে ভারত থেকে গরু মহিষ এনে আঙ্গল ফোলে কলাগাছ হয়েছেন অনেকেই। জুয়েল আহমদ বাচ্চু, কামাল আহম চৌধুরী, মাহতাব উদ্দিন প্রমুখ ব্যবসায়ীরা জানান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সুপারিশ নিয়ে বৈধ পথে ভারত থেকে গরু মহিষ আসার করিডোরের অনুমিতর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিজিবির মহাপরিচালক ও পুলিশের আইজিপি বরাবর একাধিকবার আবেদন করেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। চোরাকারবার, অস্ত্র, মাদক আসার অজুহাত দেখিয়ে সিলেট বিজিবি বিষয়টিতে আপত্তি জানায়। ফলে বৈধভাবে গরু মহিষ না আসায় সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সিলেটের কানাইঘাট সড়কের বাজারে ভারতীয় গরু কেনা বেচা বন্ধে পুলিশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে। রোববার দিনভর সড়কের বাজার সহ আশপাশ এলাকায় কানাইঘাট থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএমের নির্দেশে একদল পুলিশ রাস্তার আশপাশে অবস্থিত গরুর গড় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এখন থেকে সড়কের বাজারে নির্দিষ্ট হাটের দিন ব্যতিত কোন গরু-মহিষ কেউ বিক্রি করতে পারবে না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গরু গড় উচ্ছেদ সহ গরু বেচা-কেনা কে কেন্দ্র গড়ে ওঠা রাস্তায় যত্রছত্র ট্রাক পার্কিং বন্ধেও অভিযান করে পুলিশ। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জকিগঞ্জ থানা পুলিশও সোমবার ১২টি গরু আটক করেছে।
ওসি শামসুদ্দোহা জানিয়েছেন, ভারত থেকে অবৈধ পথে গরু আসা বন্ধ করতে হলে দু’দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে একমত হতে হবে। তাহলে সীমান্ত দিয়ে কেউ গরু নিয়ে আসতে পারবে না। পুলিশ উপজেলা আইনশৃংখলা রক্ষা করার পাশাপাশি অল্প সংখ্যক ফোর্স নিয়ে ভারতীয় গরু আটক অভিযান সব সময় অব্যাহত রেখেছে তারপরও পুলিশকে অযথা দোষারোপ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে থানায় ৩২টি ভারতীয় গরু আটক অবস্থায় রয়েছে।
জানা যায় সিলেটের কানাইঘাট, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী কিছু এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু-মহিষ বাংলাদেশে আসছে। বিজিবির কর্মকর্তারা বারবার জানিয়ে আসছেন, তারা ভারতীয় গরু আটক করে থাকেন। অনেক সময় চোরাকারবারীরা তাদের উপর গরু নিয়ে আসার সময় হামলা করে থাকে।