নতুন সড়ক পরিবহন আইন চালুর সাথে সাথে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসে বেড়েছে লাইসেন্সধারীদের ভীর। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে এখন প্রায় তিনগুন আবেদন জমা পড়ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের সামনে বহু লাইসেন্সধারীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সহ ঘুরতে দেখা যায়। বিআরটিএ অফিসে লাইসেন্সধারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে হয়রানি হচ্ছে বলে তারা জানান।
বিআরটিএ অফিস সুত্রে জানাগেছে, মোটর সাইকেলের লার্নারের জন্য ৩৪৫ টাকা ও মূল ফি ২৫৪২ টাকা জমা দিতে হয়। অথচ কোন কোন লাইসেন্সধারীর কাছ থেকে ৭ হাজহার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিদিন লাইসেন্সের জন্য ৬ শত থেকে ৭শত আবেদন পড়ছে। এতে ভোগন্তিতে পরছেন লাইসেন্স প্রত্যাশীরা। একদিকে ভোগান্তি অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ায় গ্রাহকরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
লাইসেন্সধারীরা ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারী ফি জমা দিয়ে সেই রশিদ ও লাইসেন্সের জন্য গাড়ির প্রয়োজনী কাগজপত্রাদি, ভোটার আইডি কার্ড, ছবি বিআরটিএ অফিসে জমা দিয়ে লার্নার গ্রহন করবেন। কিন্তু বিআরটিএ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা লাইসন্সেধারীদের কাছ থেকে অফিস খরচের নামে বিভিন্ন অংকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন। টাকা না দিলে নানা অজুহাতে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যে কারণে গ্রাহকরা অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে বাধ্য হয়ে লাইসেন্সেধারীরা লাইসেন্স নিচ্ছেন। এ ছাড়া অনেকে আবার বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ৭ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকায় চুক্তি করেন লাইসেন্স বানানোর জন্য। চুক্তি অনুযায়ী সব কাজ অফিসের মাধ্যমে হয়। টাকা দেওয়ার পর শুধু পরীক্ষার দিন হাজিরা দিতে হয় লাইসেন্স প্রত্যাশীদের। পরীক্ষায় কিছু না লিখেও পাশ করানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অনেকে আবার বিভিন্ন শো-রুমের মাধ্যমেও চুক্তি করে লাইসেন্স করছেন বলেও জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, তারা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রশিদ দিতে এসেছেন। রশিদ জমার পর অফিস খরচের জন্য তাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। এক পর্যায় বাধ্য হয়ে তারা ১০০ টাকা করে দিয়েছেন। এভাবে যতজন আসছে সবার কাছ থেকে বিভিন্ন অংকে টাকা নিচ্ছেন। বর্তমানে অনেক ভীর যে কারণে সময় নষ্ট না করে তারা টাকা দিচ্ছেন। আসলে বিআরটিএ অফিসে তো কোন টাকা নেবার নিয়ম নাই।
আলিফ হোসেন হৃদয় নামে একজন জানান, তিনি হিরো মোটরস শো-রুমের মাধ্যমে ৮ হাজার টাকা চুক্তিতে লাইসেন্স করেছেন। শুধু তিনি না তার মত অনেকে এভাবে অনেকে লাইসেন্স করছেন। বৈধ ভাবে লাইসেন্স করতে হলে প্রথমে প্রয়োজনী কাগজপত্রাদিসহ ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়। তারপরও অফিস থেকে দেওয়া হয় একটি লার্নার। এরপর পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং সকল ধরনের পরীক্ষায় উর্ত্তীণের পর দেওয়া হয় লাইসেন্স। কিন্তু বিআরটিএ অফিসে যাওয়া ছাড়াই সব কিছু হয়ে গেছে তার। পরীক্ষায় ফেল করার পরও তিনি লাইসেন্সের কাগজ হাতে পেয়েছেন। এতে কেউ মোটর ড্রাইভিং না করতে পারলেও সে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন। আসলে এটা তো বৈধ পন্থা না।
হয়রানী এবং অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে রাজবাড়ী বিআরটিএ অফিসের মোটরযান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে লাইসেন্সধারীদের অনেক চাপ রয়েছে। এ মাসের শুরু থেকে এ চাপ বেড়েছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ২ থেকে আড়াইশ আবেদন জমা পড়তো এখন সেখানে ৬ থেকে ৭শ আবেদন পড়েছে। অফিসের লোকবল কম থাকায় কাজে একটু সমস্যা হলেও তাদের সাধ্যমত সেবা দেবার চেষ্টা করছেন। লাইসেন্সধারীরা ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়ে তাদের অফিসে জমা দিচ্ছেন। তখন তারা লার্নার দিয়ে দিচ্ছেন এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হবার পর ফিঙ্গারসহ যাবতীয় কাজ শেষে লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে কোন ধরনের চুক্তি করা হয় না লাইসেন্সধারী বা অন্য কারো সাথে। তারা বৈধ ভাবেই লাইসেন্স করছেন বলে জানান।