ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে গড়াই নদীকূল এলাকার মানুষ। রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের নারুয়া গ্রামের গড়াই নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। সম্প্রতি নদীর পানি কমতে থাকায় ৫-৭ দিন আগে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার কোনাগ্রাম, মরাবিলা, সোনাকান্দর, জামসাপুর, বাঙরদাহ প্রভৃতি গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোথায়ও কোথায়ও দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। ফাটলগুলো ক্রমে ক্রমে বড় হচ্ছে। এরপর তা বড় বড় চাপ আকারে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বর্ষা শুরুর আগে নদীর স্রােতের গতিপথ পরিবর্তনের জন্য নদীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে কিছু এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া হয়ে ছিলো। কিন্তু তাতে তেমন কোনো লাভ হয়নি বলে দাবী করেছে এলাকাবাসী। বর্ষায় ব্যাপক আকারে কৃষিজমিতে ভাঙন দেখা দেয়। বেশকিছু পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
নারুয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কার বলেন, নদীর পানি সম্প্রতি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবারের মতো আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে নদীতে পানি বাড়ার সময়ও ভাঙন দেখা দিয়েছিলো। তখন ফসলী জমির সঙ্গে রাস্তাঘাটও ভেঙে যায়। আবারো কয়েকদিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে স্থানীয় মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম বলেন, নদীর কূলে সাধারণত গরীব মানুষ বসবাস করে। এদের বেশীর ভাগই দিন আগে দিন খায়। সবারই আর্থিক দৈন্যতা থাকে। এসব মানুষ প্রকৃতির কাছে খুব অসহায়। এরপর আবার সপ্তাহ খানেক আগে থেকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক অবস্থাপন্ন ব্যক্তিরাও অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। নদী শাসনে প্রয়োজন কার্যকর ও টেকশই পরিকল্পনা গ্রহণ। যাতে করে নদীপাড়ের সাধারণ মানুষ একটু নিরাপদে বসবাস করতে পারে।
বালিয়াকান্দি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুন নবী বলেন, প্রতিবারই পানি কমার সময় ভাঙন দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গড়াই নদীর পাড়ে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গড়াই নদীর ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারণ জরুরী ভিত্তিতে কাজ শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে করা যায়। কুষ্টিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া অংশের কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের রাজবাড়ীর অংশের ডিজাইন করা হচ্ছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এখানেও স্থায়ীভাবে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইশরাত জাহান বলেন, নারুয়া গড়াই নদীতে ভাঙনের অবস্থা ভয়াবহ। বর্ষা মৌসুমে কিছু বসতবাড়ির সঙ্গে অনেক কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই। কারণ প্রতিদিনই নতুন নতুন পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। আপাতত ক্ষতিগ্রস্থগুলোর মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া প্রায় ২০০ কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে তখন নদী ভাঙনের হাত থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে।