সকালের আলো এসে পড়তেই ফুলগুলো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে। মৃদু হলদে রং কিছুটা তীব্রতর হয়। মধুলোভী ভ্রমর দ্রুত ডানায় ভর করে মধু অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে দিয়েছে ততোক্ষণে। গামারি মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। তাই ফুলগুলো গাছের উপরে ধরে বলে সহজে চোখে দেখা যায় না। আর সাধারণ মানুষও এ ফুলটি তেমন একটা চোখে দেখেননি। অনেকটাই অচেনা গামারি ফুল।
সবুজ ঘাস থেকে কুঁড়িয়ে একটি ফুল নাকে নিয়ে শুকতেই কী অপূর্ব ঘ্রাণ হৃদয়কে আকুল করে তুলে। ফুলটি প্রস্ফুটন মৃদু সৌরভমুখর। নাকের সাহায্যে উপভোগ করতেই সতেজতা ফিরে আসে বারবার।
‘গামারি’ ছাড়াও এ ফুলটিকে গামার, গাম্বার, মধুমতি প্রভৃতি নামে উল্লেখ করা হয়। এ গাছের ফুলগুলো সবুজ ঘাসে লুটিয়ে পড়ে। অথবা মাটির বুকে। তবে সবুজ ঘাসে তাদের পড়ে থাকার দৃশ্য চোখ জুড়ায়। এ গামারি ফুল সম্পর্কে স্থানীয় আবদুর রহিম বলেন, আসলে গামারিকে আমরা কাঠ হিসেবে ভালো করে চিনি। এ ফুলের সঙ্গে আমাদের পরিচয় নেই তেমন একটা। তবে ফুলগুলো খুব সুন্দর। ফুল ফোটার পর গাছের আংগুরের মতো ছোট ছোট ঘন হয়ে সবুজ ফল ধরে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, এটি আমাদের দেশীয় গাছ। এ গাছের ফুলটি দেখতে খুব সুন্দর। হালকা ঘ্রাণ রয়েছে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea এবং পরিবার Verbenaceae।
তিনি আরো বলেন, এ গাছটি একসময় বনে প্রচুর ছিল, এখন কমে গেছে। বারো-চৌদ্দ বছর বয়সে এ গাছটির উপর একটি পরজীবী উদ্ভিদ আক্রমণ করে এর কাঠ নষ্ট করে ফেলে। তখনই এ কাঠটি ব্যবহারের উপযুক্ত হয়।
কর্ণফুলি পেপারমিলে পেপার পালসের কাঁচামাল হিসেবে এ গাছটি কাপ্তাই, রাঙামাটি এসব অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় বলে জানান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।