ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন সিনেটের একটি প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার সিনেটের এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবে ভেটো দেন তিনি। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মধ্যপ্রাচ্যের দারিদ্রকবলিত দেশটিতে সৌদি জোটের সামরিক অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র যেন আর সমর্থন না দেয়। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি। এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, এই প্রস্তাব আমার সাংবিধানিক কর্তৃত্বকে দুর্বল করার জন্য, অপ্রয়োজনীয় ও বিপজ্জনক প্রচেষ্টা। এটি আজকের এবং আগামীর জন্য আমেরিকান নাগরিক ও দেশের সাহসী কর্মীদের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। সিনেটে এই প্রস্তাবের কো-স্পন্সর ছিলেন ভারমন্টের ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। মঙ্গলবার ট্রাম্পের ভেটোর পর টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে এ নিয়ে কথা বলেন বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি বলেন, ট্রাম্পের ভেটো দেওয়ার ঘটনায় তিনি হতাশ হলেও বিস্মিত হননি। ডেমোক্র্যাট দলীয় এই সিনেটর বলেন, বোমা নয়, ইয়েমেনের জনগণের প্রয়োজন মানবিক সহায়তা। ইয়েমেনের ভয়াবহ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সম্পৃক্ততা বন্ধের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রত্যাখ্যান করেছেন। এতে আমি হতাশ। কিন্তু অবাক হচ্ছি না। ২০১৫ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে উচ্ছেদ করে রাজধানী সানা দখলে নেয় ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীরা। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পালিয়ে যান হাদি। ২০১৫ সালের মার্চে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিত্রদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি আরব। সৌদি জোটের অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর এই যুদ্ধের সমালোচনা তীব্র হতে থাকে। গত ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে মানবিক সহায়তার জন্য ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতেই ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসন বন্ধের লক্ষ্যে সিনেটে প্রস্তাব তোলেন বার্নি স্যান্ডার্স। সিনেটের অনেক রিপাবলিকান সদস্যও আগ্রাসনে মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতার বিরোধী। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এই প্রস্তাব যথার্থ নয়। কেননা, ইয়েমেন যুদ্ধে মার্কিন বাহিনী শুধু বিমানের জ¦ালানি ও অন্য সহায়তা দিচ্ছে, তারা সরাসরি যুদ্ধ করছে না। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধে মার্কিন সক্ষমতা ক্ষুণœ হবে। তবে ইয়েমেনে সৌদি জোটের সামরিক আগ্রসনকে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। রিপাবলিকান সিনেটর মাইক লি মনে করেন, যুদ্ধ শুধু একটি স্থানে থেমে থাকে না। এটি দুই পক্ষের সেনা সদস্যদের গোলাগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ বিষয় নয়। আধুনিক যুদ্ধে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জিম ম্যাক গভর্ন-এর ভাষায়, ইয়েমেনে নিক্ষেপ করা প্রায় সব বোমাই যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানেও বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না মানুষের বাড়িঘর থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্ত। এমনকি জানাজা, শরণার্থী শিবির ও স্কুল বাসেও বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। আকাশ থেকে এভাবে বোমা নিক্ষেপের ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বেসামরিক ব্যক্তিরা। এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের ব্যাপারে মত দিয়েছেন মার্কিন সিনেটররা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সহায়তা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে মত দিয়ে আসলেও এর বিপরীতে রায় দেন অধিকাংশ সিনেটর। তবে ওই বছরের মতো কংগ্রেস মুলতুবি হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি আর অগ্রসর হয়নি। ওই সময়ে ইয়েমেনের যুদ্ধের ব্যাপারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বার্নি স্যান্ডার্স বলেছিলেন, ‘আজ সৌদি আরবের স্বৈরশাসকদের প্রতি আমরা বলেছি যে, আমরা তাদের সামরিক অ্যাডভেঞ্চারের অংশ হতে চাই না।’
০৮
১৪ আরব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
এফএনএস আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৪ আরব দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। রাশিয়ান-আরব কোঅপারেশন ফোরামের পঞ্চম বৈঠকের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মস্কোয় মিলিত হন তারা। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনের উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলো তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে একতাবদ্ধ। তারা চায় তাদের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগোলিক অখ-তার ব্যাপারে যেন অন্যরা সম্মান প্রদর্শন করে। বৈঠকে অংশ নেওয়া দেশগুলো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে মস্কো প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইরানের সঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ওপরও জোর দেন তিনি। সৌদি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের জানিয়েছেন, বৈঠকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে কথা হয়েছে। এতে ইসরায়েল কর্তৃক দখলকৃত অঞ্চলে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রস্তাবনার প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে। বৈঠকের আরেক আলোচ্য বিষয় ছিল লিবিয়া সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান। আদেল আল জুবায়ের জানান, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সৌদি আরব সফরের কথা রয়েছে। তবে এর তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটি চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।