কখনো ওসি, কখনো ইউএনও আবার কখনো এডিসি, ডিসি, এসপি’র ফোন নম্বর ক্লোন (বিশেষ প্রযুক্তি) করে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করাই তাদের কাজ। অত্যন্ত চতুর এই চক্রের খপ্পরে পরে সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দের বেশ কয়েকজন। এই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, লালমনির হাট সদর উপজেলার সাপটানা মদনের চক গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে শিপুল ইসলাম (২৫), ইটাপোতা গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে আশরাফুল আলম আশিক (২৪) ও আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে শামীম আলী (৩৮)।
জানা যায়, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি’র সরকারী ফোন নম্বর ক্লোন করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী ও সাধারন মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভনে ফেলে কয়েক লক্ষ টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। এ বিষয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের হয় গোয়ালন্দ ঘাট থানায়। এ প্রেক্ষিতে এই চক্রকে পাকড়াও করতে মাঠে নামে পুলিশ।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, তদন্তের শুরুতে টাকা আদায় করা বিকাশ একাউন্ট গুলো বিকাশ হেড অফিস আবেদন করে ফ্রিজ করা হয়। এরপর মোবাইল ট্রাকিং ও একাউন্ট খোলা বিকাশ এজেন্ট ও জাতীয় পরিচয় পত্রের মানুষদের অনুসন্ধান করে অবস্থান নিশ্চিত হয় পুলিশ। লালমনির হাট জেলার বিভিন্ন স্থানে গত পাঁচদিন ধরে বিভিন্ন সময় গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিকাশ প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
এ চক্রের প্রতারনার শিকার গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২১ মার্চ তার ফোনে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসির সরকারী নম্বর থেকে ফোন আসে। এসময় তাকে বলা হয় নির্বাচন নিয়ে তারা ডিসি অফিসে জরুরী বৈঠকে বসেছেন, এডিসি স্যার আপনার সাথে কথা বলবেন, স্যারের ব্যাক্তিগত নম্বর দিয়ে তাকে এখনই ফোন করতে বলেন। ওসি নম্বর থেকে ফোন আসায় তিনি কোন সন্দেহ না করে দ্রুত ওই নম্বরে ফোন করেন। এসময় কথিত এডিসি বলেন, নির্বাচনী মাঠে আপনার অবস্থা মোটামুটি ভালো। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসন আপনার পক্ষে কাজ করলে আপনার বিজয় নিশ্চিত। তাই এই মুহুর্তে খরচ-খরচার জন্য বিকাশের মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা দিতে হবে। এসময় তিনি অনুরোধ করে বলেন, আজ ব্যাংক বন্ধ এক লক্ষ টাকা দিতে পারব না। আপাতত ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছি। এই কথা বলে তার মেয়ের গহনা বন্ধক রেখে দ্রুত ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে সেই টাকা পাঠিয়ে দেন। এর কিছুক্ষন পর ওই চক্র আরো ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে তার সন্দেহ হয়। খোঁজ নিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা লালমনির হাট সদর উপজেলার বনগ্রামের ভোলা মিয়া (২৮) জানান, তার মা কদভানু বিবির বয়ষ্ক ভাতার ব্যাংক একাউন্টে নমীনি হিসেবে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপির প্রয়োজন হয়। তাই তিনি তার জাতীয় পরিচয় পত্র আশরাফুল আলম আশিকের ফটোকপির দোকানে যান। আশিক কৌশলে তার জাতীয় পরিচয় পত্রের একটি ফটোকপি রেখে দেয়। পরবর্তীতে সেটা দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খুলে প্রতারনার কাজে ব্যবহার করে তাকে বিপদে ফেলেছে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফী জানান, এই প্রতারক চক্রটি ফোন নম্বর ক্লোন করে ওসি, ইউএনও, এডিসি, ডিসি, এসপি সেজে ফোন করে মানুষকে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে। প্রতারনার শিকার একাধিক ব্যাক্তি থানায় জিডিসহ ক্ষতিগ্রস্থ আবুল কালাম আজাদ প্রতারক চক্রের ৬ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জনকে গত পাঁচদিন ধরে চেষ্টার পর লালমনির হাট থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। শনিবার গ্রেফতারকৃত ৩ আসামীকে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা অব্যাহত আছে।