বর্তমানে পীরগঞ্জ থানার ৩ ওসিই ব্যতিক্রমধর্মী। তাঁরা কেউই ধুমপান করেন না, যার প্রভাব পড়েছে থানার অন্যান্য কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের উপর। এতে পুলিশ এবং সাধারন মানুষ প্রতিদিন ৩০ হতে ৪০ প্যাকেট উচ্চ মুল্যের সিগারেট ক্রয় থেকে বিরত থাকছেন। ওসি-দারোগাদের কাছে সাক্ষাতে আসা সাধারন মানুষজনও আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন। এভাবেই পীরগঞ্জ থানা ধুমপানমুক্ত হওয়ায় উপজেলাবাসীর মাঝে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে থানায় ৩ জন করে পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা হলেন, ওসি, ওসি (তদন্ত) এবং ওসি (অপারেশন্স)। পাশাপাশি পীরগঞ্জ থানায় সেকেন্ড অফিসারসহ ১৩ জন এসআই, ১৩ জন এএসআই, নারী এএসআই ১ জন এবং কনস্টেবল ৩৭ ও নারী কনস্টেবল ৩ জনসহ প্রায় ৭০জন কর্মরত রয়েছেন। ওসি সরেস চন্দ্র গত বছরের ৯ অক্টোবর, ওসি (তদন্ত) মাসুমুর রহমান গত বছরের ৭ জুন এবং ওসি (অপারেশন্স) শুকুর আলী ২০১৭ সালের ৬ জুলাই এই থানায় যোগদান করেন। উল্লিখিত ৩ ওসিই ধুমপান করেন না। এ ছাড়াও থানার অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাও অনেকেই ধুমপান করেন না বলে জানা গেছে। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, যেহেতু ওসি স্যাররাই ধুমপান করেন না, তাই নিজেদেরকেও লুকিয়ে ধুমপান করতে ইচ্ছে করে না। পাশাপাশি আমাদের পরিবারের অজ্ঞাতে স্ত্রী-সন্তানদের চোখ এড়িয়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য বা সিগারেট পানে অপরাধবোধ কাজ করে। তাই আমরাও ধুমপান করি না। থানার সামনে কয়েকজন দোকানীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, থানায় আগত মানুষজন প্রতিদিন ৩০ হতে ৪০ প্যাকেট সিগারেট কিনতো। এভাবে মাসে ৯’শ থেকে ১২’শ প্যাকেট সিগারেট বিক্রি হতো। প্রতি প্যাকেট ব্যান্ডসন সিগারেটের মুল্য ২২০ টাকা হলে প্রতি মাসে এ পরিমান দাড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার থেকে ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এতে বছরে ২৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা থেকে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পর্যন্ত সিগারেট বিক্রি হতো। গত এ বছরেরও বেশী সময় ধরে সিগারেট বিক্রি নেই বললেই চলে। সাধারন মানুষও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। একমাত্র নারী এএসআই হাছনা বেগম বলেন, এই থানা ধুমপানমুক্ত হওয়ায় খুব ভাল লাগে। সেকেন্ড কর্মকর্তা মোসলেম উদ্দিন বলেন, জীবনেও ধুমপান করিনি। সন্তানদের কারণেও অনেকেই সিগারেট বর্জন করেছে। ওসি (অপারেশন্স) শুকুর আলী বলেন, আমি কখনোই সিগারেট বা মাদকজাতীয় নেশা দ্রব্য গ্রহন করিনি। তাছাড়া আমাদের সন্তানদেরকে নির্মল পরিবেশে রাখতে ধুমপান ও মাদক পরিহার করা উচিত। ওসি (তদন্ত) মাসুমুর রহমান জানান, মাদকমুক্ত জীবন সবাই কামনা করে। ধুমপান ও নেশাজাতীয় দ্রব্য দেশকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা রাখে। ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, জীবনের শুরু থেকেই ধুমপান বিরোধী ছিলাম। আমার আরও ২ জন ওসি (তদন্ত ও অপারেশন্স) ধুমপান করেন না। প্রতিদিনই এএসআই-এসআইদের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে ধুমপানের কুফল সম্পর্কে প্রচার করে যাচ্ছি। আর থানার অর্ধশতাধিক পুলিশের উপর এর প্রভাব পড়েছে। পীরগঞ্জ থানার ক্যাম্পাস বর্তমানে ধুমপানমুক্ত। পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাঃ রুহুল আমিন বুলেট বলেছেন, মাদক সেবনে রোগের পাশাপাশি মৃত্যুও ঘটে। এ রকম সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি সিগারেটের প্যাকেটেই লেখা রয়েছে।