অভাবের সংসারে দির্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় বিছানায় কাতরাচ্ছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের গোপালপুর গ্রামের গোপাল। তার অসহায় অবস্থার কথা জানতে পেরে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন কালীগঞ্জের বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী উত্তরা মটরস এর পরিচালক সেলিম রেজা। রোববার দুপুরে তিনি শয্যাশায়ী গোপালকে দেখতে তার বাড়িতে ছুটে যান। গোপালের চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজ খবর নিয়ে তার মায়ের হাতে চিকিৎসা বাবদ নগদ ৫ হাজার টাকা ও পরিবারের জন্য বেশ কিছু খাদ্য সামগ্রী তুলে দেন। এ সময় কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন, সাধারন সম্পাদক ও ডেইলী বাংলাদেশের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি সাবজাল হোসেন সহ, স্থানীয় চিকিৎসক বসির আহম্মেদসহ সূধীজনেরা উপস্থিত ছিলেন। গোপাল ওই গ্রামের আরতি বিশ্বাসের ছেলে।
উল্লেখ্য, গোপাল আর উত্তম ২ ভাই। শিশু বয়সেই তাদের বাবা মারা যান। বসতভিটের মাত্র ৮ শতক জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর ২ সন্তান ছোট তাই সংসারের রোজগারের দায়িত্ব পড়ে মা আরতি বিশ্বাসের কাঁধে। সন্তানদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে বাধ্য হয়ে পরের বাড়ি কাজ করতেন তিনি। মায়ের কষ্ঠ লাঘবে সংসারের প্রয়োজনে গোপাল আর উত্তম ২ ভাই কিশোর বয়সেই পরের সেলুনে কাজ শুরু করলে কিছুটা ভরসা আসে সংসারে। কিন্তু এভাবে কিছুদিন যেতে না যেতেই গোপালের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। তখন স্থানীয় চিকিৎসকদের পরামর্শে চিকিৎসা সেবা নিয়ে কাজ না হওয়ার পর যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেয়। কিন্তু কোন উন্নতি ঘটেনি। বরং সে ক্রমেই দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে এখন শয্যাশায়ী।
গোপালের ভাই উত্তম বিশ্বাস বলেন,সংসারের অভাব অনাটনের মধ্যদিয়েও প্রায় ১০ বছর আশপাশের চিকিৎসকেরা ঠিক মত গোপালের রোগ নির্নয় করতে পারেননি। সর্বশেষ স্থানীয়দের আর্থিক সহযোগীতায় ২ বছর আগে কয়েক দফা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন। তারা বলেছেন,গোপালের খাদ্যনালীতে সমস্যা হয়েছে। ঢাকাতে নিয়ে অপারেশন করাতে পারলে গোপালকে সুস্থ করা সম্ভব। সে জন্য দরকার প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা। কিন্তু গত ২ বছর যাবৎ এ টাকা জোগাড় করতে পারেননি তারা। এখন এক প্রকারের বিনা চিকিৎসায় বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে তার ভাই গোপাল।
উত্তম বিশ্বাস আরো জানান,ছোটবেলা থেকেই বাবা হারা সংসারে ভাতের জন্য এক প্রকারের যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বসতভিটের মাত্র ৮ শতক জমিই তাদের ২ ভাইয়ের একমাত্র সম্বল। গোপালের চিকিৎসায় ধারদেনা করে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। এখন নিজে সেলুনে কাজ করেন। যে পয়সা আয় হয় তা দিয়ে কোন প্রকারে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে। এমন অবস্থায় সন্তানদের কথা চিন্তা করে বৃদ্ধা মা বাড়ির সামনে একটি টোং দোকান চালান। এভাবেই জীবন যাপন করতে হয় তাদের। নিজে বেঁচে থাকা অবস্থায় টাকার জন্য রক্তের ভাইয়ের অপারেশন করাতে পারছেন না। চোখের সামনেই বিছানায় কাতরাচ্ছে রক্তের ভাই। এটা ভাবলে ভাই হিসেবে কষ্টে বুক ফেঁটে যায়।
গোপালের মা আরতি বিশ্বাস জানান, বড় ছেলে উত্তম সেলুনে কাজে যা আয় করে তা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ঠিকমত খাবারই জোটেনা। এদিকে ছোট ছেলে নিজের সামনে চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে বিছানায় শুয়ে গোপাল তার দিকে ফ্যাল ফেলিয়ে চেয়ে থাকে। তার বেঁচে থাকার আকুতি মা হিসেবে সহ্য করা কঠিন। তাই ৭০ বছরের বৃদ্ধা বয়সেও সন্তানদের কথা চিন্তা করে টোং দোকানে কিছু মালামাল তুলে সারাদিন বসে থাকেন। এখান থেকে কিছু পয়সা আয় হলে গোপালের পেছনে ব্যয় করেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,মায়ের সামনে মৃত্যুর পথযাত্রী সন্তানের বেঁচে থাকার আকুতি বড় কষ্টকর ব্যাপার। যা একজন মা ছাড়া পৃথিবীর অন্য কারও বোঝানো যাবে না। রোববার সন্তানের চিকিৎসার জন্য নগদ ৫ হাজার টাকা হাতে পেয়ে টাকা দাতা সেলিম রেজাকে জড়িয়ে ধরে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সাথে সাথে উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।