১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল মুহুর্তে সড়ক পথে প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরে সম্মুখ যুদ্ধে পরাস্থ হয়েছিলো পাক সেনারা। সেইদিনের যুদ্ধে চারজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। একই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে আটজন পাক সেনা নিহত হয়। সেই থেকে অদ্যবর্ধি প্রতিবছর ২৫ এপ্রিল বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পথে প্রথম পাক হানাদার প্রতিরোধ দিবস পালন করে আসছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
সূত্রমতে, সেদিন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে পাকসেনারা বরিশালে প্রবেশের সময় গৌরনদী উপজেলার সাউদেরখালপাড় (কটকস্থল) নামক এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পরে। সেইদিনের সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর চারজন বীর সৈনিক শহীদ হয়েছেন। যে কারণে ২৫ এপ্রিল গৌরনদী প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
সেই যুদ্ধের সম্মুখ যোদ্ধা সার্জেন্ট (অবঃ) আবদুর রাজ্জাক চোকদার পাক সেনাদের সাথে তাদের সম্মুখ যুদ্ধের বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। বলেন, জীবনে এমন একটি সুযোগ তৈরি হবে ভাবতেই পারিনি। ১৯৭১ সালে শুরু হয় স্বাধীনতার মুক্তি সংগ্রাম। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারাদিয়ে এলাকার যুব সমাজের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টি করার তৎকালীন সেনা সার্জেন্ট সৈয়দ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে তিনিসহ সুবেদার গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ আবুল হাসেম, সৈয়দ অলিউল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, আলাউদ্দিন সরদার ওরফে আলা বক্স, আবদুল হাকিম, মোসলেম উদ্দিন, মুজিবুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, পরিমল মন্ডলসহ অনেকেই ছিলেন সম্মুখ যুদ্ধে।
মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বরিশালে প্রবেশের খবর পেয়ে সকাল থেকেই সাউদেরখালপাড় (কটকস্থল) নামকস্থানে মুক্তিযোদ্ধারা মহাসড়কের দুই পাশে অ্যামবুশ (যুদ্ধ প্রস্তুতি) গ্রহণ করেন। সকাল ১০টার দিকে পাক বাহিনী বরিশালে প্রবেশের সময় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিদের কনবাই গাড়ির চাকার ওপর গুলিবর্ষণ করার পর পাক সেনারা সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এসময় পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে চারজন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। ঘটনার তিনদিন পর ঘটনাস্থল থেকে গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল হাসেম, গৈলার আলাউদ্দিন সরদার ওরফে আলা বক্স, চাঁদশীর পরিমল মন্ডলের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হলেও বাটাজোরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেনের লাশ তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়নি। তাকে দাফন করা হয় ধানডোবা নামক এলাকায়।
সেই যুদ্ধের একাধিক সম্মুখ যোদ্ধারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ মে তৎকালীন মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত গৌরনদীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে গেলেও দীর্ঘবছরেও গৌরনদীতে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি সৌধ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা গৌরনদীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষনে দ্রুত স্মৃতি সৌধ নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।