নিখোঁজের প্রায় এক মাসেও উদ্বার হয়নি বা কোন রকম খোঁজ মেলেনি লালমনিরহাটের অটো চালক শাহজাহান আলী ওরফে নাহিদের। স্বামীর সন্ধান পেতে পুলিশ প্রশাসনসহ সাধারন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্ত্রী মোছাঃ মতিয়া বেগম দিপা ও দুই কন্যাসন্তান চাঁদনী বিল্লাহ ও লামিয়া জাহান সাদ।
এ ব্যাপারে স্ত্রী মতিয়া বেগম দিপা লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেও আজ পর্যন্ত তার স্বামীর কোন খোঁজ মেলাতে পারেননি বা নিখোঁজ স্বামীর সন্ধ্যান লাভে পুলিশ প্রশাসনের কোন সহযোগীতা পাননি বলে সাংবাদিকদের জানান। নিখোঁজ শাহজাহান ওরফে নাহিদ সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়িভাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা এবং দুই কন্যা সন্তানের পিতা।
মতিয়া বেগম দিপা বলেন, গত ২৭মার্চ বুধবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর জন্য বাহিরের দরজা বন্ধ করতে গেলে তারপর আর ফেরত আসেনি তার স্বামী শাহজাহান। অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও স্বামী না আসায় তিনি তার স্বামীর খোঁজে বাহিরে বের হয়ে দেখেন দরজা খোলা অথচ সেখানে তার স্বামী নেই। পরে তার বড় মেয়েকে ডেকে স্বামীর খোঁজ করেন। অনেক খোঁজা খুজির পরও যখন তার স্বামীর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তখন তিনি তার আশপাশের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনদের বিষয়টি খুলে বলেন। তারাও নাহিদকে খোঁজাখুজি করেন কিন্তু তার কোন খোঁজ পায় না।
পরদিন ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে নাহিদের পাশের বাড়ির এক লোক নিজের কাজ করতে বাহিরে যাওয়ার সময় বাড়ির পাশে রক্ত মাখা লুঙ্গি ও জামা পড়ে থাকতে দেখে দিপার বাড়িতে খবর দেয়। খবর পেয়ে দিপা সেখানে গিয়ে সেই রক্ত মাখা কাপড় তার স্বামীর বলে সনাক্ত করেন। পরে থানায় খবর দিলে থানা পুলিশ সেই রক্ত মাখা কাপড় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
দিপা আরো বলেন, স্বামী সন্তানদের নিয়ে বাড়ি করে থাকার জন্য তার মা মারা যাওয়ার আগে তাকে ১৪শতক জমি লিখে দেন। পরবর্তীতে তার মা মারা গেলে ভাইয়েরা জবরদস্তি করে ৭শতক জমি লিখে নেয় এবং তার নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় দিপা রায় পেলেও তার জমি ফেরত দেইনি। পরে সে তার অবশিষ্ট জমিতে ঘর তুলে স্বামী সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু তার আপন ভাই, ভাবী ও ভাতিজা তাকে সেখান থেকে উৎখাত করার জন্য বিভিন্ন সময় হুমকী দিয়ে আসছে। তারা জমি ছেড়ে দিয়ে যদি সেখান থেকে সরে না যায় তাহলে তাদের সবাইকে হত্যা করা হবে বলেও জানান তিনি। এ ব্যাপারে ২০১৭ সালের মে মাসের ১২ তারিখে ১০জনকে অভিযুক্ত করে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। তারপর থেকে তাদের প্রতি অত্যাচার আরো বেড়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনই তারা লাঠি, খোচাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার স্বামীকে মারার জন্য আসে। নিখোঁজের দিন দিনের বেলাতেও তার ভাই ভাবীরা দিপার বাড়িতে হামলা করে। তার বাড়ির গেট ভেঙ্গে তাকে এবং তার স্বামীকে মারতে যায়। পরে তারা ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে ঘরের জানালা দিয়ে ঢিল ছুরে দিপাকে আহত করে। এ সময় তারা দিপার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে চাঁদনী বিল্লাহকে পরীক্ষা দিতে দিবে না বলেও হুমকী দেয়। উপায়ন্তর না পেয়ে দিপা মজিদা খাতুন সরকারী মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের সহযোগীতায় কলেজ হোস্টেলে রেখে মেয়ের পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে মেয়ে চাঁদনী বিল্লাহ কলেজ হোস্টেল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোট মেয়ে লামিয়া জাহান সাদ তার মায়ের সাথেই থাকেন।
তার ভাই ভাবীই তার স্বামীকে গুম করেছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দিপা বলেন, তার আপন ভাই, ভাবী ও ভাতিজা ছাড়া তার আর কোন শত্রু নাই। তাই তিনি বলেন তার ভাইরাই তার স্বামীকে হত্যা করে গুম করেছে। কেননা তিনি তার স্বামীর রক্ত মাখা কাপড় পেয়েছেন। রক্ত মাখা কাপড় পেয়ে প্রথমে তিনি ১১জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দিলেও থানা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ না নিয়ে তাকে সাধারন ডায়েরী করতে বলেন। পরে বাধ্য হয়ে তিনি স্বামী নিখোঁজের একটি ডায়েরী করেন।
দিপা কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, আজ প্রায় একমাস হতে চললেও এখনো সে জানে না তার স্বামী বেচে আছে না কি মরে গেছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বলতে তার স্বামীই ছিলেন। পরিবাওে তিন জনের খাওয়ার জন্যও তেমন কিছুই নাই। মেয়ের লেখা পড়ার খরচও দিতে পারছেন না। এদিকে তার ভাই ভাবীরাও তাকে অত্যাচার করছে। বর্তমানে তিনি দুই কন্যাসন্তান নিয়ে াত্যান্ত মানবেতর জিবন যাপন করছেন। তিনি তার স্বামীর খুজে দিতে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাহায্য কামনা করেন।
দিপার বড় ভাই গোলাম রব্বানী সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার মা বোনকে বাড়ি করে থাকার জন্য কোন জমি দেন নাই। মিথ্যে দলিল করে নিজেদের নামে তাদের জমি লিখে নিয়েছে। তারপরেও সেখানে বাড়ি করে তার মতো সে তার স্বামী সন্তান নিয়ে থাকছেন। এতে তাদের কি যায় আসে? যে সে তার বোনের পরিবারকে অত্যাচার করবে? আর কেনই বা তার বোন জামাইকে হত্যা করে গুম করবে? এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি নিজেও তার বোন জামাইকে অনেক খুজেছেন। তবে তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তাদেরকে ফাঁসানোর জন্যই তার বোন জামাইকে নিজে লুকিয়ে রেখে তার বোন পরিকল্পিত ভাবে তাদের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ দিচ্ছে।
দিপার অপর এক ভাই আসাদ বলেন, তিনি বাহিরে চাকরি করার সুবাদে তার ভাইয়েরা তাদের নিজ বোন দিপার উপর অন্যায় অত্যাচার করছে। তার ভাই ভাবীরা মামলাবাজ হামলাবাজ। তারপরেও কিছুদিনের মধ্যে ছুটিতে বাড়িতে গেলে বিষয়টি দেখবেন বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট সদর থানার উপ সহকারী (এসআই) ও ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, নিখোঁজ ব্যাক্তির সন্ধ্যান লাভে পুলিশ প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছেন এবং খুব দ্রুত তার সন্ধ্যান পাবেন বলেও জানান তিনি।