যশোরের মণিরামপুরে টেকা নদীর তলদেশ পলিতে ভরাট হওয়ায় জোয়ারের উপচে পড়া পানির চাপে গ্রাম রক্ষা বাঁধে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। যে কোন সময় বাধঁটি ধ্বসে বিল কেদারিয়া পাড়ের অন্তঃত ১০ গ্রাম, বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে গ্রামবাসী।
এলাকা সরেজমিন গেলে গ্রাম রক্ষা বাঁধের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ঘের ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসিরা মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের উপর বালু বস্তা চাপা দিয়ে রেখেছে। তারপরও বাঁধের ফাটল রোধ করা যাচ্ছে না। ফাটল দিয়ে পানি বের হতেই আছে। এভাবে চলতে থাকলে যে কোন সময় তা ধ্বসে সব কিছু ভাসিয়ে নিতে পারে বলে গ্রামবাসি আশঙ্কা করছে। জোঁয়ারের চাপে বাঁধটির উপর দিয়ে পানি উপচে পড়ার উপক্রমও হয়েছে। উপজেলার টেকেরঘাট ব্রিজ হতে রাজবংশি পাড়ার পাশ দিয়ে টেকা নদীর গ্রাম রক্ষা বাঁধটির কারণে পাঁচাকড়ি, নেহালপুর, গাবরডাঙ্গা, আ¤্রঝুটা, লখাইডাঙ্গা, ডাঙ্গামহিষদিয়া, দহর মশিয়াহাটিসহ অন্তঃত ১০টি গ্রাম রক্ষা পেয়ে আসছে।
বাঁধের পাশেই রয়েছে রাজবংশি পাড়া। এ সময় উপস্থিত ওই পাড়ারই স্থানীয় ইউপি সদস্য সুধন্য বিশ্বাস বলেন, চরম অনিশ্চিয়তা আর আতংকের মধ্যে পাড়ার সকল বয়সি নারী-পুরুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ঘের ব্যবসায়ী ইসলাম বলেন, এভাবে নোনা পানি বিলে ঢুকলে সব মাছ মরে সাদা হয়ে যাবে। এর ফলে তার মতো শত শত ঘের ব্যবসায়ী পথে বসবে। মহিতোষ বিশ্বাস নামের স্থানীয় এক কৃষক বলেন, বিলে এখন ধানকাটার কাজ চলছে। এমতাবস্থায় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে হাজার হাজার একর ধান নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি কোন ভাবেই বিলে নোনা পানি ঢোকে তাহলে আর ফসল ফলানো যাবে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুস সা’দত বলেন, নদীর তলদেশ পলিতে ভরাট হওয়ায় জোয়ারের চাপে পানি ভাধটি উপচে পড়ার উপক্রম হয়েছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে চরম দুর্ঘটনা।
ভবদহ পানি নিস্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালি বলেন, টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু না হলে ভবদহ পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা দুর্বিসহ হয়ে উঠবে। এক থেকে দুই বছরের মধ্যে ভবদহ স্লুইচ গেটের উত্তরের বিস্তৃর্ণ বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
যশোর পাউবো’র (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্মামী বাঁধটি বিপদজনক অবস্থায় আছে যার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বলেন, এর জন্য দায়ি ঘের ব্যবসায়ীরা। মাছের ঘেরের পাড় হিসেবে বাঁধকে ব্যবহার করায় দুই পাশের (নদী ও ঘের ) পানির চাপে পাড়ের মাটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।