কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব এলাকায় বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত না হওয়ায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হবার পাশাপাশি ফসলহানি ও নদী ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন নদী তীরের মানুষ। এলাকাবাসী বর্ষার আগেই বাঁধ মেরামতের দাবী জানালেও কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় মেরামত বিলম্বিত হচ্ছে।
সরেজমিন জানা গেছে, গত দু’বছরের বন্যায় ধরলা নদীর তীরবতী সারোডোব ও বড়ভিটা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। গত বছর গ্রামবাসীদের উদ্যোগে বাঁধ মেরামত করে কোনমতে চলাচল উপযোগী করা হয় বাঁধের উপরের গুরুত্বপূর্ণ কুড়িগ্রাম-ফুলবাড়ী সড়কটি। বাঁধের রাস্তার অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হওয়ায় বাকী অংশে বাঁশের পাইলিং দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়। গ্রামবাসীরা চাঁদা তুলে এই কাজ শুরু করে। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা দিয়ে সহায়তা করে। তবে এত কিছুর পরেও রক্ষা পায়নি গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটি। বাঁধের অনেক অংশ প্রায় উন্মুক্ত হয়ে রয়েছে। শুকনো মৌসুমে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় চিন্তিত এলাকাবাসী। সংলগ্ন হলোখানা, রাঙামাটি, চর কাগজিপাড়া, ভাঙামোড়, খোঁচাবাড়ি, চর বড়াইবাড়ি, লক্ষীকান্ত, দ: রাঙামটি, মন্ডলপাড়াসহ প্রায় ৪০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আশঙ্কা করছে বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়ার। আর এতে ফসলহানির পাশাপাশি বালু জমে আবাদি জমি অনাবাদী হবার আশঙ্কা করছে এলাকার মানুষ।
সারডোব গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক ও ফিরোজ মিয়া জানান, ২০১৭ সালের বন্যায় জমির উপর ব্যাপকহারে বালু পরে জমি অনাবাদী হয়ে যায়। এখনও অনেক জমি থেকে ৪-৫ ফুট বালুতে ঢেকে আছে। নতুন করে এবার প্লঅবিত হলেও আবাদযোগ্য জমিই থাকবে কীনা সন্দেহ। হলোখানা গ্রামের কৃষক একরামুল ও আজিজুর রহমান জানান, বন্যার পানিতে ফসল ডুবে যাবার পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ওঠার মতো উঁচু স্থানও নেই। এবার বাঁধটি ভেঙে গেলে তারা কোথায় যাবেন তা চিন্তিত।
বাঁধটি বিলীন হলে ব্যাপক ভাঙনে বসতভিটা, স্কুল, রাস্তাসহ গ্রামটি পুরোপুরি বিলীনের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। ছাটকালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল গফুর বলেন, ‘স্কুলটি এবছর ভেঙে গেলে আড়াইশ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।’ গত দু বছরে তারা মানববন্ধন ও সমাবেশসহ অনেক দেন দরবার করলেও বাঁধ ও সড়ক মেরামত না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা দাবী করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার বাঁধটি রক্ষার আশ^াস দিলেও বরাদ্দ না পাবার কারণে কাজ করতে পারছেনা। হলোখানা ইউনিয়নের প্রাক্তন মেম্বার আশরাফ আলী জানান, গত বছর ভাঙন প্রতিরোধের জন্য এলাকার শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ নদীর পারে মানববন্ধন করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এ সময় বাঁধটি রক্ষা করে যোগাযোগ সচল রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বারবার তাদের কাছে ধর্ণা দিলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। অর্থ বরাদ্দ না পাবার অজুহাতে হাত গুটিয়ে বসে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সারডোবের বাঁধ মেরামতে অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ করতে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে তারা ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেয়ার আশা করছেন। বর্ষার আগে বরাদ্দ পেলে বাঁধ মেরামত সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তারা।