চট্টগ্রামে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিচয়ে জালাল উদ্দিন নামে এক বাস চালককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলা পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হলেও কার্যত পুরো রংপুর বিভাগের আট জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনটির ডাকা হঠাৎ এই পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবর্হন ফেডরেশনের রংপুর বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রংপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক এমএ মজিদ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করে রংপুরের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি ও এসপিকে স্মারকলিপি দেন। এ সময় তিনি বলেন, রংপুর বিভাগে কোনো পরিবহন ধর্মঘট আহবান করা হয়নি। রংপুর বিভাগে বাসসহ সকল পরিবহণ চলবে। কোন আলোচনা ছাড়াই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বিভাগীয় সভাপতি ইন্ধনে নীলফামারীসহ চার জেলায় ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। তিনি এভাবে হুট করে একক সিদ্ধান্তে কোন কর্মসূচি দিতে পারেন না। তার এই হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এ সময় আরো বলেন, চালক হত্যার সাথে জড়িত ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে তাদের বিচারের দাবি জানান। তা না হলে আগামি ১ মে শ্রমিক দিবসে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশন রংপুর বিভাগীয় সভাপতি ও সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আকতার হোসেন বাদল নীলফামারী,দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে বাস চালক হত্যার প্রতিবাদে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে এটি পুরো বিভাগে নয়। চার জেলায় হবে। পরে সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে রংপুর বিভাগে কর্মসুচির ডাক দেয়া হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে রংপুর মহানগরীর কামারপাড়া ঢাকা কোচ স্ট্যান্ড, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মডার্ণ মোড় বাস স্ট্যান্ড, মেডিকেল মোড় বাস স্ট্যান্ড, কুড়িগ্রাম লোকাল বাস স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়েনি। কাউন্টার থেকে ফেরত দেয়া হয় বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার যাত্রীবাহি কোন বাস না ছাড়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেক যাত্রীই সকালে হতাশ হয়েছে ফিরে গেছেন।
স্থানীয় শ্রমিক নেতারা জানায়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্য পরিচয় দিয়ে জালাল উদ্দিন নামে শ্যামলী পরিবহনের এক বাস চালককে মারধর করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি আকতার হোসেন বাদল। তবে পুরো রংপুর বিভাগে এই ধর্মঘট চলছে।
মর্ডাণ মোড়ে এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা মিলন মিয়া ও এনামুল হক মুরদা নামে দুই যাত্রী বলেন, ‘আমি ঢাকায় যেতে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। শুক্রবার আমার পরীক্ষা আছে। কিন্তু এখন শুনছি পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বুঝতেছি না কি করব।’
কামারপাড়া কোচ স্ট্যান্ডের কলার বয় হোসেন আলী বলেন, ‘আমাদের ওস্তাদকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
উল্লেখ্য, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে শ্যামলী পরিবহনে ইয়াবা তল্লাশির নামে চালক জালাল উদ্দিনকে বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়। গুরুত্বর আহতাবস্থায় তাকে রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। বুধবার (২৪ এপ্রিল) জালালের মরদেহ নিজ বাড়ি দিনাজপুরে নিয়ে আসা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনরা এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন। নিহত জালাল উদ্দিন দিনাজপুরের দশমাইল এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে। তার এক প্রতিবন্ধীসহ তিন ছেলে সন্তান ও স্ত্রী রয়েছেন।