রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী বাজার থেকে পুর্ব-দক্ষিণ কোনের রাস্তা বেয়ে প্রায় ৮ কি.মি. দূরে নিভৃত পল্লী দিঘা গ্রাম। এ গ্রামের নামেই বাজারের নামকরন দীঘা বাজার। আলোকিত মানুষ “বই প্রেমী” মরহুম পলান সরকার এর বাড়ী থেকে মাত্র তিন কি.মি. দূরে এ বাজার। শুক্রবার তখন বিকেল ঠিক সাড়ে ৫টা, বাজারে গিয়ে বসলাম গ্রামীণ ডাক্তার মিন্টুর দোকানে। হঠাৎই মিন্টু বললেন কফি খাও। কফি শব্দটা শুনেই অবাক হলাম! নিভৃত পল্লীতে কফি! পরে দেখলাম তিন মাটির কাপে কফি নিয়ে হাজির হলো দোকান মালিক। তার দিকে চেয়ে আরও বিস্মিত হলাম। এই নিভৃত পল্লীতে মামুন কফি সোপের মালিক! কথা বললাম তার সাথে। নাম তার মামুনুর রশিদ। সবাই মামুন বলেই ডাকে। বয়স ৩৪ বছর। পিতা আবদুল মান্নানও ছিলেন একজন চা বিক্রেতা। পিতার সূত্র ধরেই ছাত্র জীবন থেকেই চা বিক্রি পেশায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। মামুন দীঘা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পাস করে। এরপর দিঘা হাইস্কুল ও মহাবিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণী পাস করে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। কিন্তু অর্থাভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই পনের বছর বয়সে সরাসরি চা বিক্রি পেশায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এভাবেই চলছে ২০ বছর তার এই পেশা। পরবর্তীতে দিঘা হাইস্কুল ও মহাবিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সিরাজুল করিম খোকন ও ক্রীড়া শিক্ষক তোফাজ্জল কবীর মিলন প্রথম তাকে চায়ের পাশাপাশি কফি বিক্রির পরামর্শ দেন। এখন তার চায়ের চেয়ে কফিই বিক্রি হয় বেশি। এক কাপ কফি খেতে অনেক গন্যমান্য ব্যক্তি বিকেল বেলায় দূর দূরান্ত থেকে যান মামুনের কফি হাউজে। দোচালার ছোট একটি ঘর এই কফি হাউজ। বসার জন্য ১২/১৪টি টেবিল বসানো।
মামুন বলেন, প্রতিদিন এঘরেই ১০০ খেকে ১৫০ কাপ কফি কিক্রি করেন। যার প্রতি কাপ কফি ১৫ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন তার এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ২৫০ টাকা বিক্রি হয়। খরচ বাদে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা লাভ হয়। এ দিয়েই বাবা-মা, স্ত্রী-কন্যাসহ সাত সদস্যের পরিবারের খরচ চলে মামুনের। অসুস্থ পিতা, বৃদ্ধ মা মর্জিনার চিকিৎসার খরচও চালাতে হয় এ কফি হাউজের আয় দিয়ে। ১২ বছর বয়েসের একমাত্র মেয়ে মেঘলার বিভিন্ন দাবী দাওয়াও পুরণ করে এ সীমীত আয়ের মধ্যেই। মেয়ের নামানুসারে কফি হাউজের নামকরন করেন “মেঘলা কফি হাউজ”।
আড়ানী থেকে কফি খেতে আসা প্রভাষক মঞ্জুরুল আলম মাসুম বলেন, প্রায়শ:ই এই মেঘলা কফি হাউজে কফি খেতে আসি। তিনি আরও বলেন, শহরাঞ্চলেও এত স্বাদের কফি পাইনি।
এদিকে স্থানীয় দিঘা কলেজের শিক্ষক তোফাজ্জল কবীর মিলন, বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, প্রতিদিন অফিসে প্রবেশের সময় এবং ত্যাগের সময় শিক্ষকমন্ডলী এই কফি পান করেন।
স্থানীয় বাউশা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিক এ ব্যাপাবে বলেন, “আমিও মামুনের দোকানে কফি খেয়েছি”। সমাজের বিত্তবান ও সহৃদয়বান ব্যক্তি যদি কিছু অর্থ সহায়তা করেন তবে দোকানটা আরও বড় ও সুন্দর করা যেত বলে মামুনের আবেদন।