বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে সহকারী বন সংরক্ষক (সাতক্ষীরা রেঞ্জ)’র নেতৃত্বে সাঁড়াশী অভিযানে সুন্দরবনের চিহ্নিত হরিণ শিকারী চক্রের তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
২৮ এপ্রিল ভোর রাত সাড়ে চারটার দিকে পশ্চিম সুন্দরবনের কলাগাছিয়া এবং খলিশাবুনিয়া এলাকার মধ্যবর্তী অংশ হতে শিকার কাজে ব্যবহৃত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট একটি নৌকাসহ তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন নীলডুমুর গ্রামের আমজাদ মোল্যার ছেলে আবদুল হাকিম ও বাবু এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকার মালিক আবদুল হালিমের শ্যালক গোলখালী গ্রামের আজিজুল। এ সময় তাদের নিকট থেকে সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ কাঠ, শিকার নিষিদ্ধ রেনু উদ্ধারের তথ্য দিয়েছে বনবিভাগ সুত্র।
অভিযান পরিচালনাকারীরা আটককৃতদের কাছে পৌছানোর আগেই গুরুত্বপুর্ন কিছু আলামত নিয়ে ইঞ্জিন চালিত ঐ নৌকার সাথে থাকা একটি ডিঙি নৌকাযোগে শিকারী চক্রের অপর কয়েক সদস্য দ্রুত পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
বনবিভাগ ও স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায় বিভাগীয় বনকর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন এর কাছে ২৭ এপ্রিল রাত নয়টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি হরিণ শিকারে যাওয়া ঐ চক্রটি সম্পর্কে গুরুত্বপুর্ন তথ্য দেয়। নীলডুমুর গ্রামের আমাজদ মোল্যার ছেলে আবদুল হালিমের নামে বিএলসিকৃত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ঐ নৌকা নিয়ে ১২ সদস্যের সংঘবদ্ধ চক্রটি বৃহস্পতিবার রাতে সুন্দরবনে প্রবেশ করে বলেও নিশ্চিত করে তারা। শিকার কাজে ব্যবহৃত ফাঁদ এবং প্রয়োজনে বনদস্যুদের সহায়তায় তাদেরই অস্ত্র নিয়ে হরিণ শিকারের পরিকল্পনায় পুর্বেকার মত এবারও তারা বনে ঢুকেছে বলে জানানো হয় তথ্য দাতাদের পক্ষ থেকে।
বনবিভাগ সুত্র আরও জানিয়েছে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা তথ্য পাওয়া মাত্রই সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জিএম রফিককে বিষয়টি জানিয়ে যেকোন মুল্যে ঐ চক্রটিকে আটকের নির্দেশ দেন। পরক্ষনে রাত সাড়ে দশটা/এগারটার দিকে পশ্চিম সুন্দরবনের সবগুলো ইউনিটকে সতর্ক করে এসিএফ জিএম রফিক নিজে অভিযানে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশন কর্মকর্তা কবীর উদ্দীনও তার সাথে ছিলেন। একপর্যায়ে রাত সাড়ে চারটার দিকে কলাগাছিয়া এবং খলিশাবুনিয়া এলাকার মধ্যবর্তী স্থান থেকে চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে ইঞ্জিন চালিত নৌকাসহ ঐ তিনজনকে আটক করেন তারা।
জেলেরা জানিয়েছে অভিযানের শুরুতে নৌকার মালিকসহ নীলডুমুর গ্রামের আনিছ, মোস্তফা, আবদুল হাই জঙ্গল, ৯ নং সোরা গ্রামের ডাকাত জিন্নাত, হরিণ বিল্লাল ও সাহেব আলী ডিঙি নৌকা নিয়ে খালের মধ্যে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছে আটককৃত দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ঐ নৌযান নিয়ে স্থানীয় এক বনকর্মকর্তার সাথে যোগসাযশে সুন্দরবন থেকে পারশে মাছের রেনু সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার রাতে ঐ দুর্নীতিবাঁজ বনকর্মকর্তার সাথে পরিকল্পনা করেই আটককৃতসহ পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যায়।
তারা জানান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষকের আন্তরিক চেষ্টায় প্রায় দুই বছর পর চক্রটি আইনের আওতায় এসেছে। এর আগেও একই ব্যক্তির নামে বিএলসিকৃত আরও একটি ইঞ্জিন চালিত নৌযান বনবিভাগ আটক করে আইনের আওতায় এনেছিল।
এদিকে শিকারী চক্রকে আটকের বিষয়ে সহকারী বন সংরক্ষক জিএম রফিক জানান, ডিএফও স্যারের নির্দেশে রাতেই সবগুলো ইউনিটকে সতর্ক করার কারণে তাদেরকে আটকে সফল হয়েছেন তারা। তবে ছোট ডিঙি নৌকাযোগে কিছু সরঞ্জামাদী নিয়ে কয়েক ব্যক্তি পালিয়ে গেছেন বলে অটিককৃতদের মাধ্যমে তারা জেনেছেন বলেও জানান তিনি।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুমন বলেন, সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হলে বনবিভাগের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এবারের মত যদি স্থানীয়রা সার্বক্ষনিকভাবে অপরাধীদের সম্পর্কে তথ্য দেয় তবে সুন্দরবনের সুরক্ষা মোটেও কষ্টকর হবে না। তথ্য দেয়া স্থানীয় জেলেদের এবং গুরুত্বপুর্ন অভিযানে অংশ নেয়ায় তিনি বনকর্মীদের ধন্যবাদ জানান।