চট্টগ্রামে গত ১৬ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৯৩টি গার্মেন্টস। এতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও নানা বাধা মোকাবেলা করে টিকে থাকা গার্মেন্টসগুলোও আছে একাধিক সংকটে। একসময় মোট গার্মেন্টস রপ্তানির ৩৪ শতাংশ হতো চট্টগ্রাম থেকে। এখন তা সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। বিষয়টি চট্টগ্রামের শিল্পায়ন ও অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন। সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গার্মেন্টস ক্রেতাদের সংগঠন অ্য্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতা জোট অনেকগুলো শর্ত জুড়ে দেয়। এর মধ্যে ভবনের নিরাপত্তা, ইলেক্টিক্যাল নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বিশ্বমানের করার ব্যাপারে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স শর্ত দেয়। দেশে অ্যাকর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন গার্মেন্টস রয়েছে ১হাজার ৫শ’২১টি। অ্যালায়েন্সের নিয়ন্ত্রণাধীন ৮শ’২৯টি। এ ছাড়া আইএলও থেকে ১হাজার ৫শ’৪৯টি গার্মেন্টস নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়ে প্রথম ধাক্কায় চট্টগ্রামে ৩০৬টিসহ সারা দেশে এক হাজার তিনশ গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যায়।
এখানে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন শর্ত পূরণের জন্য কারখানা মালিকদের বাধ্য করছেন। এর মধ্যে ভবন নির্মাণ, নতুন করে বৈদ্যুতিক ওয়ারিং এবং ফায়ার সেফটির জন্য পানির রিজার্ভার ও ফায়ার ডোর করতে হয়েছে। ভবনের পিলারে নতুনভাবে ঢালাই করেছে অনেক কারখানা। লাইটও বাড়িয়েছে। অগ্নিকান্ডের সময় নিজেদের পানি দিয়ে যাতে আগুনের সাথে যুদ্ধ করা যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারও করা হয়েছে। আর এসব করতে গিয়ে একেকটি কারখানাকে এক কোটি টাকা থেকে চার কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। যেসব কারখানার মালিক ওই বাড়তি বিনিয়োগ করতে পারছেন না তাদেরকে ব্যবসা গুটাতে হচ্ছে। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সের প্রথম ধাক্কা সামলে টিকে ছিল এমন অনেক কারখানাও পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিজিএমইএর নবনির্বাচিত প্রথম সহ-সভাপতি এম এ সালাম সাংবাদিকদের বলেন, বিগত ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে চালু কারখানা ছিল ৪শ’২৫টি। ২০১৮ সালে চালু কারখানার সংখ্যা নেমে আসে ৩শ’৮৬টি। আর এখন চট্টগ্রামে চালু কারখানা রয়েছে ৩শ’৩২টি। বছর শেষে এই সংখ্যা আরো কমার আশঙ্কাও রয়েছে।
সালাম বলেন, মুলত অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বিভিন্ন শর্ত পূরণ ছ করতে না পেরে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও পণ্য উৎপাদনে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের ঢাকার চেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস সেক্টর বাজার হারাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে কোনো ক্রেতা সরাসরি চট্টগ্রামে আসতে পারেন না। থাই এয়ার বা সিঙ্গাপুর এয়ারের মতো ফ্লাইটের চট্টগ্রামের কানেক্টিভিটি থাকলে বিদেশি বায়ারদের চট্টগ্রামে আসা সহজ হতো। এখন তা না থাকায় বিদেশি ক্রেতারা ঢাকায় এসে অবস্থান করেন। এরপর নানা ঝামেলা সয়ে তারা চট্টগ্রামে আসতে চান না। ঢাকা থেকেই পণ্যের অর্ডার দিয়ে পুনরায় নিজ দেশে ফিরে যান।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, তবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চট্টগ্রাম আবারও হারানো গৌরব ফিরে পাবে। বিমান বন্দর এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অলংকার পর্যন্ত এই রুটের সড়কটি গত তিন বছর খারাপ অবস্থায় আছে। যানজট লেগেই থাকে। এভাবে চলতে থাকলেতো কোন ব্যবসায়ই করা যাবেনা। বন্দরসহ বিভিন্নমুখী সুবিধার সঠিক ব্যবহার করা গেলে এখানে শুধু গার্মেন্টস নয়, পুরো শিল্পখাতই উপকৃত হবে। দেশও হবে স্বনির্ভর।